ডেঙ্গুর জ্বর নিয়ে অনেক মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। কারণ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা মৃত্যুর সংখ্যা একেবারে কম নয়। দেশে বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অনেক। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ প্রতিকার ও চিকিৎসা নিয়ে এই আর্টিকেলটি অনেক উপকারে আসবে। এবং কিছু নিয়ম মানলে ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্তি পওিয়া সম্ভব।
কোন শরীরে কোন লক্ষণ দেখলে আপনি বুঝবেন যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় কী হতে পারে?
ডেঙ্গু জ্বর চারটি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ডেঙ্গু ভাইরাসের (DEN-1, DEN-2, DEN-3, এবং DEN-4) যে কোনও একটির কারণে ঘটে যা রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করার পরে প্রতিলিপি হয়। এই আণুবীক্ষণিক প্রাণীটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়, ফলে অসুস্থতার অনুভূতি হয়।
গুরুতর ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরে, ভাইরাসটি প্লেটলেটগুলিকে সংক্রামিত করে (কোষ যা জমাট বাঁধে এবং রক্তনালীকে গঠন করে), ফলে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হয়। যেহেতু রক্তের অভ্যন্তরীণ ফুটো বন্ধ করার জন্য পর্যাপ্ত প্লেটলেট নেই, এর ফলে শক, অঙ্গ ব্যর্থতা এবং এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের মাত্র ৮০% ক্ষেত্রেই লক্ষণ দেখা যায়। বাকি 80% রোগের কোন লক্ষণ বা উপসর্গ দেখায় না। যখন উপসর্গগুলি দেখা দেয়, তখন ফ্লুর মতো অন্যান্য অসুস্থতার জন্য ভুল করা হয়। সংক্রামিত মশা কামড়ানোর চার থেকে দশ দিন পরে লক্ষণগুলি শুরু হয়। রোগী নিম্নলিখিত অভিজ্ঞতা হতে পারে:
সাধারণত, শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেমের লোকেরা এক সপ্তাহ বা 10 দিনের মধ্যে পুনরুদ্ধার করে, কিন্তু আপোসহীন ইমিউন সিস্টেমের লোকেদের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলি আরও খারাপ হয় এবং প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। এর ফলে মারাত্মক ডেঙ্গু, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম হতে পারে।
লক্ষণগুলি সাধারণত জ্বর কমার এক বা দুই দিন পরে শুরু হয় এবং এতে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:
যদি কেউ উপরে উল্লিখিত উপসর্গগুলির মধ্যে কোনটি লক্ষ্য করে, তবে খুব দেরি হওয়ার আগে অবিলম্বে চিকিত্সার পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
অভ্যন্তরীণ রক্তপাত, অঙ্গের ক্ষতি বা রক্তচাপের বিপজ্জনক হ্রাস সবই মারাত্মক ডেঙ্গু জ্বরের জটিলতা।
সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেবার পর আবারো জ্বর আসতে পারে। এর সাথে শরীরে ব্যথা মাথাব্যথা, চেখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে।
২-জ্বর-হলেই-কি-চিন্তিত-হবেন"২. জ্বর হলেই কি চিন্তিত হবেন?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলছেন, এখন যেহেতু ডেঙ্গুর সময়, সেজন্য জ্বর হল অবহেলা করা উচিত নয়।
জ্বরে আক্রান্ত হলেই সাথে-সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ।
তিনি বলছেন, ''ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তারা জ্বরকে অবহেলা করেছেন। জ্বরের সাথে যদি সর্দি- কাশি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কিংবা অন্য কোন বিষয় জড়িত থাকে তাহলে সেটি ডেঙ্গু না হয়ে অন্যকিছু হতে পারে। তবে জ্বর হলেই সচেতন থাকতে হবে।''
সরকারের কমিউনিক্যাবল ডিজিজ কন্ট্রোল বা সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের অন্যতম পরিচালক ড. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ''জ্বর হলে বিশ্রামে থাকতে হবে। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, জ্বর নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা উচিত নয়। একজন ব্যক্তি সাধারণত প্রতিদিন যেসব পরিশ্রমের কাজ করে, সেগুলো না করাই ভালো। পরিপূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন।''
৪. কী খাবেন?
প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন - ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে। এমন নয় যে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে, পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
অধ্যাপক তাহমিনা বলেন, ''ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে।
চিকিৎসকরা বলছেন, প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম। কিন্তু কোন ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
৬-প্ল্যাটিলেট-বা-রক্তকণিকা-নিয়ে-চিন্তিত" ৬. প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা নিয়ে চিন্তিত?
ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা এখন আর মূল ফ্যাক্টর নয় বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক তাহমিনা।
তিনি বলেন, ''প্ল্যাটিলেট কাউন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কোন প্রয়োজন নেই। বিষয়টি চিকিৎসকের উপর ছেড়ে দেয়াই ভালো।''
সাধারণত একজন মানুষের রক্তে প্ল্যাটিলেট কাউন্ট থাকে দেড়-লাখ থেকে সাড়ে চার-লাখ পর্যন্ত।
ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ভাগ রয়েছে।
এ ভাগগুলো হচ্ছে - 'এ', 'বি' এবং 'সি'।
প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা নরমাল থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী 'এ' ক্যাটাগরির।
তাদের হাসপাতালে ভর্তি হবার কোন প্রয়োজন নেই। 'বি' ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের সবই স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন তার পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা সে কিছুই খেতে পারছে না।
>অনেক সময় দেখা যায়, দুইদিন জ্বরের পরে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে হাসপাতাল ভর্তি হওয়াই ভালো।
'সি' ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ'র প্রয়োজন হতে পারে।
সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। কারণ এ সময়টিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে।
কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল আরো এগিয়ে এসেছে। এখন জুন মাস থেকেই ডেঙ্গু জ্বরের সময় শুরু হয়ে যাচ্ছে।
ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না। সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে এডিস মশা তৎপর হয়ে উঠে। এডিস মশা কখনো অন্ধকারে কামড়ায় না।
মশা সুন্দর-সুন্দর ঘরবাড়িতে বাস করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এডিস মশা সাধারণত ডিম পাড়ে স্বচ্ছ পানিতে। কোথাও যাতে পানি তিন থেকে পাঁচদিনের বেশি জমা না থাকে।
এ পানি যে কোন জায়গায় জমতে পারে। বাড়ির ছাদে কিংবা বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন পয়েন্টে, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা টায়ার কিংবা অন্যান্য পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে।
ডেঙ্গু জ্বরের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। প্রচুর পরিমাণে তরল পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পেশী ব্যথা এবং জ্বর কমাতে প্যারাসিটামলের মতো উপসর্গগুলি উপশম করতে ডাক্তাররা নির্দিষ্ট ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) ওষুধ লিখে দিতে পারেন। যাইহোক, অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন, নেপ্রোক্সেন সোডিয়াম ইত্যাদির মতো কিছু ওটিসি ব্যথা উপশমকারী এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এগুলো অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের জটিলতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর বা গুরুতর ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে রোগীর প্রয়োজন হতে পারে:
ডেঙ্গু জ্বর থেকে নিজেকে রক্ষা করার দুটি উপায় হল মশার কামড় এড়ানো এবং টিকা দেওয়া।
কিছু রোগ অনিবার্য। একজন মশার কামড় এড়াতে যতই চেষ্টা করুক না কেন, এটা কোনো না কোনো সময়ে ঘটতে পারে। তাই একজনকে ভেতর থেকে শক্তিশালী হতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে একজনকে অবশ্যই তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে হবে। একটি শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এমন কোনো বিদেশী জীবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করবে। সবশেষে, কোনো রোগের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কখনো মিস করবেন না। ভবিষ্যতে প্রতিকূল ফলাফল এড়াতে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
ত্যাগ: ডেঙ্গু জ্বর কয়দিন থাকে, ডেঙ্গু জ্বর কি ছোয়াচে, ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খাওয়া যায়, ডেঙ্গু জ্বরের, ডেঙ্গু জ্বরের ২য় লক্ষণ, ডেঙ্গু জ্বরের ইনজেকশন, ডেঙ্গু জ্বরের কারণ,ডেঙ্গু জ্বরের ট্যাবলেট, ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার, ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিবেদন, ডেঙ্গু জ্বরের মেয়াদ, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গু রোগীর খাবার কি
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ মাইনুল ইসলাম মহিন
প্রধান কার্যালয়: বি ১ সাগর সিনেমা হল মার্কেট, নিচতলা কালিয়াকৈর, গাজীপুর।
ফোন: 01631325455 (WhatsApp)
অফিস ইমেইল: info@bhorernotunbarta.com
নিউজ: bhorernotunbarta@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের, নিবন্ধনকৃত: রেজিঃ রাজ ১২৯।
দৈনিক ভোরের নতুন বার্তা অনলাইন পত্রিকা সর্ব স্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১-২০২৩