8:21 am, Saturday, 19 October 2024

নালিতাবাড়ীতে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আপন ভাগ্নেকে জবাই, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ৬

 

মনোয়ার হোসেন,নালিতাবাড়ী (শেরপুর)প্রতিনিধি :

প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে আপন ভাগ্নেকে গলাকেটে হত্যার পরিকল্পনা করেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ১০নং যোগানিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আ’লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হবি। তার পরিকল্পনাতেই ছেলে ও দুই ভাতিজা মিলে বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে গলা কেটে হত্যা করা হয় শাহ কামাল ওরফে কদি মিয়া (৩৫) কে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই চেয়ারম্যান, তার ছেলে, স্ত্রী, ভাই এবং দুই ভাতিজাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেল চারটার দিকে থানায় সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানান সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নালিতাবাড়ী সার্কেল দিদারুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলন ও সরেজমিনে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলা-সংঘর্ষ চলাকালে তৎকালীন যোগানিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবির অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন প্রতিপক্ষের কৃষক ইদ্রিস আলী (৩০)। ‘চাঞ্চল্যকর মামলা’ হিসেবে আমলে নিয়ে তৎকালীন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের আগ্নেয়াস্ত্র ও হত্যা এ দুই মামলায় পৃথক চার্জশীট দাখিল করেন। দীর্ঘদিন হাজতবাসের পর আসামীরা জামিনে বেরিয়ে আসে।
এদিকে হবি চেয়ারম্যানের গুলিতে নিহত ইদ্রিস আলীর বাবা ফজল মিয়ার সাথে চেয়ারম্যানের ভাগ্নে দিনমজুর শাহ কামালের ২০১৮ সালে বন্ধকি নেওয়া ১১ কাঠা জমি নিয়ে বিরোধ ও বিচার-শালিস চলছিল। এ বিরোধকে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে ভাগ্নেকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ ফজলকে ফাঁসাতে পরিকল্পনা করেন ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবি। তার সাথে এ পরিকল্পনায় অংশ নেন তারই সহোদর ভাই হারেজ আলী ও স্ত্রী আমেলা খাতুন ঝর্ণা।
বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক আটটার দিকে নিজ ঘর থেকে স্থানীয় গড়াকুড়া বাজারের উদ্দেশ্যে বের হন দিনমজুর শাহ কামাল। গড়াকুড়া বাজার থেকে মস্তুফা শাহ কামালকে ডেকে হাবিবুর রহমান হবির পরিত্যক্ত বাড়ির একটি ঘরে পাঠায়। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করা সারোয়ার জাহান শান্ত ও রাহুল শাহ কামালকে চেপে ধরে। মস্তুফা ছুড়ি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে। পরে ফ্লোরে জমাট বাঁধা রক্ত ধুয়েমুছে বস্তা ও কম্বল দিয়ে পেচিয়ে মরদেহটি মাঝ রাতে হরে খালের ধারে ফেলে রাখা হয়। এসময় বস্তা ও কম্বল পুড়িয়ে বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা।
এদিকে গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় স্ত্রী শেফালী স্বজনদের বাড়ি ফোন করে খোঁজ নিয়ে স্বামীর সন্ধান পেতে ব্যর্থ হন। শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কুত্তামারা হরে খাল পাড়ের বাসিন্দা রনি মিয়া প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বেরুয়। এসময় বিলের ধারে ঝোপের নিচে মরদেহ দেখে তা শাহ কামালের গলাকাটা মরদেহ বলে সনাক্ত করে। পরে ত্রিপল নাইনে ফোন করলে বেলা এগারোটার দিকে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই মরদেহ উদ্ধার করে।
অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডের তদন্তকালে চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবির বসতঘর তল্লাসী করে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুড়ি, জামা-কাপড় ও জুতা জব্দ করে পুলিশ। এসময় পরিকল্পনাকারী হাবিবুর রহমান হবি (৫৫), তার ছেলে সারোয়ার জাহান শান্ত (২৬), তৃতীয় স্ত্রী আমেলা খাতুন ঝর্ণা (৪২), সহোদর ভাই হারেজ আলী (৫৮), ভাতিজা মস্তুফা (৩০) ও রাহুলকে (২২) গ্রেফতার করা হয়। রাতেই হত্যাকাণ্ডের শিকার শাহ কামালের মা অছিরন বেগম বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। শনিবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে হত্যায় সরাসরি জড়িত তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল আলম ভুইয়া, পুলিশ পরদর্শক (তদন্ত) আব্দুল লতিফ মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Mainul Islam Mohin

সর্বাধিক পঠিত

দাউদকান্দিতে মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদে ব্যবসায়ীর সংবাদ সম্মেলন

নালিতাবাড়ীতে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আপন ভাগ্নেকে জবাই, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ৬

Update Time : 12:23:25 pm, Saturday, 27 January 2024

 

মনোয়ার হোসেন,নালিতাবাড়ী (শেরপুর)প্রতিনিধি :

প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে আপন ভাগ্নেকে গলাকেটে হত্যার পরিকল্পনা করেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ১০নং যোগানিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আ’লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হবি। তার পরিকল্পনাতেই ছেলে ও দুই ভাতিজা মিলে বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে গলা কেটে হত্যা করা হয় শাহ কামাল ওরফে কদি মিয়া (৩৫) কে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই চেয়ারম্যান, তার ছেলে, স্ত্রী, ভাই এবং দুই ভাতিজাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেল চারটার দিকে থানায় সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানান সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নালিতাবাড়ী সার্কেল দিদারুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলন ও সরেজমিনে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলা-সংঘর্ষ চলাকালে তৎকালীন যোগানিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবির অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন প্রতিপক্ষের কৃষক ইদ্রিস আলী (৩০)। ‘চাঞ্চল্যকর মামলা’ হিসেবে আমলে নিয়ে তৎকালীন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের আগ্নেয়াস্ত্র ও হত্যা এ দুই মামলায় পৃথক চার্জশীট দাখিল করেন। দীর্ঘদিন হাজতবাসের পর আসামীরা জামিনে বেরিয়ে আসে।
এদিকে হবি চেয়ারম্যানের গুলিতে নিহত ইদ্রিস আলীর বাবা ফজল মিয়ার সাথে চেয়ারম্যানের ভাগ্নে দিনমজুর শাহ কামালের ২০১৮ সালে বন্ধকি নেওয়া ১১ কাঠা জমি নিয়ে বিরোধ ও বিচার-শালিস চলছিল। এ বিরোধকে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে ভাগ্নেকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ ফজলকে ফাঁসাতে পরিকল্পনা করেন ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবি। তার সাথে এ পরিকল্পনায় অংশ নেন তারই সহোদর ভাই হারেজ আলী ও স্ত্রী আমেলা খাতুন ঝর্ণা।
বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক আটটার দিকে নিজ ঘর থেকে স্থানীয় গড়াকুড়া বাজারের উদ্দেশ্যে বের হন দিনমজুর শাহ কামাল। গড়াকুড়া বাজার থেকে মস্তুফা শাহ কামালকে ডেকে হাবিবুর রহমান হবির পরিত্যক্ত বাড়ির একটি ঘরে পাঠায়। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করা সারোয়ার জাহান শান্ত ও রাহুল শাহ কামালকে চেপে ধরে। মস্তুফা ছুড়ি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে। পরে ফ্লোরে জমাট বাঁধা রক্ত ধুয়েমুছে বস্তা ও কম্বল দিয়ে পেচিয়ে মরদেহটি মাঝ রাতে হরে খালের ধারে ফেলে রাখা হয়। এসময় বস্তা ও কম্বল পুড়িয়ে বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা।
এদিকে গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় স্ত্রী শেফালী স্বজনদের বাড়ি ফোন করে খোঁজ নিয়ে স্বামীর সন্ধান পেতে ব্যর্থ হন। শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কুত্তামারা হরে খাল পাড়ের বাসিন্দা রনি মিয়া প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বেরুয়। এসময় বিলের ধারে ঝোপের নিচে মরদেহ দেখে তা শাহ কামালের গলাকাটা মরদেহ বলে সনাক্ত করে। পরে ত্রিপল নাইনে ফোন করলে বেলা এগারোটার দিকে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই মরদেহ উদ্ধার করে।
অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডের তদন্তকালে চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবির বসতঘর তল্লাসী করে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুড়ি, জামা-কাপড় ও জুতা জব্দ করে পুলিশ। এসময় পরিকল্পনাকারী হাবিবুর রহমান হবি (৫৫), তার ছেলে সারোয়ার জাহান শান্ত (২৬), তৃতীয় স্ত্রী আমেলা খাতুন ঝর্ণা (৪২), সহোদর ভাই হারেজ আলী (৫৮), ভাতিজা মস্তুফা (৩০) ও রাহুলকে (২২) গ্রেফতার করা হয়। রাতেই হত্যাকাণ্ডের শিকার শাহ কামালের মা অছিরন বেগম বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। শনিবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে হত্যায় সরাসরি জড়িত তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল আলম ভুইয়া, পুলিশ পরদর্শক (তদন্ত) আব্দুল লতিফ মিয়া উপস্থিত ছিলেন।