
নিজস্ব প্রতিবেদক:
আদালতের রায়েও থামেনি তার অপসাংবাদিকতা। পুরোনো অভ্যাসের মতো আবারও মিথ্যা খবর তৈরির ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করছেন সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রার সম্পাদক এস এম মোরশেদ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তথ্য প্রমাণ ছাড়াই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবর তৈরির ভয় দেখিয়ে তিনি অর্থ আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
এর আগেও তার বিরুদ্ধে অনলাইনে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা ও ভীতি প্রদর্শক তথ্য প্রকাশের দায়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত ২০২৪ সালের ২৬ মে জরিমানা ও কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিল। সেই মামলায় সম্পাদক মোরশেদকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এজাজ রহমানকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ইসলামি ব্যাংকের কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানকে নিয়ে ২০২০ সালের অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর সংখ্যায় একাধিক মানহানিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করে অপরাধ বিচিত্রা। ওই প্রতিবেদনগুলোতে তাকে নারীলোভী, অর্থ আত্মসাৎকারী, মাদকাসক্ত, নারী পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী হিসেবে তুলে ধরা হয়।
শুধু তাই নয়, সেই প্রতিবেদনগুলোর স্ক্রিনশট সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যার পরিণতিতে মানহানির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন মনিরুজ্জামান।
আদালতে দীর্ঘ তদন্ত ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। কিন্তু সেই রায়ও থামাতে পারেনি মোরশেদকে।
অভিযোগ: টাকা না দিলে “নেতিবাচক রিপোর্ট” প্রকাশের হুমকি
সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, এস এম মোরশেদ তার পুরোনো কৌশলে আবার সক্রিয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, “মোরশেদ ভাই ফোন দিয়ে বলেন, আপনার নামে একটা রিপোর্ট আসছে, আমি বন্ধ করে দিতে পারি। তারপরই টাকা চাওয়া শুরু হয়।”
একই ধরনের অভিযোগ আরেকজন ভুক্তভোগীর—“তিনি আমাকে বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে রিপোর্ট তৈরি আছে, চাইলে তুলে ফেলতে পারি, আপনি ব্যবস্থা করেন।’ এটা কি সাংবাদিকতা?”
এ বিষয়ে জানতে এস এম মোরশেদের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
পেশাজীবী সমাজে ক্ষোভ
সাংবাদিক মহলে এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এমন দণ্ডপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তিকে সংবাদপত্র প্রকাশনার অনুমতি দেওয়া সাংবাদিকতা পেশার জন্যই হুমকি।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক এক কার্যনির্বাহী সদস্য বলেন, “মোরশেদের মতো লোকেরা সাংবাদিকতার নামে ব্যবসা করে। তারা যা করে, তা মূলত সাদা পোশাকের চাঁদাবাজি।”
পেশাদার সাংবাদিকদের মতে, এস এম মোরশেদ ও তার পত্রিকা অপরাধ বিচিত্রা বর্তমানে সাংবাদিকতা নয়, বরং মানুষকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি প্রয়োজন
অভিযোগ রয়েছে, এই ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সঠিকভাবে পদক্ষেপ না নেওয়ায় মোরশেদের মতো ব্যক্তিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সচেতন মহলের দাবি, দণ্ডপ্রাপ্ত এমন ব্যক্তিকে সংবাদমাধ্যম চালানোর অনুমতি দেওয়া যায় না। দ্রুত তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই অপসাংবাদিকতার চক্রকে আইনের আওতায় আনতে হবে।