রাজউক ইঞ্জিনিয়ার টিপুর ‘অঘোষিত সাম্রাজ্য’ 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময়: শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৫ । ৩:৪৮ অপরাহ্ণ

 

নিজস্ব প্রতিনিধি:

তিতাস আর হোমনার জনপদে যেন হঠাৎই এক নাম ঘূর্ণিঝড়ের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। রাজউকের ইঞ্জিনিয়ার বদিউল আলম টিপু। সরকারি চাকরির বেতন কাঠামোর সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যহীন যে অবিশ্বাস্য সম্পদ বিস্তার তিনি শ্বশুরবাড়ির এলাকায় দাঁড় করিয়েছেন, তা এখন পুরো অঞ্চলে আলোড়ন তুলেছে।

গ্রামের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বাজারের প্রান্তিক ব্যবসায়ী পর্যন্ত এক ভাষায় বলছে, “টিপুর টাকা আসে কোন খনি থেকে?” হোমনা উপজেলার মনিপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা (অব.) সিরাজুল ইসলাম মোল্লার সন্তান বদিউল আলম টিপুর শ্বশুরবাড়ি তিতাস উপজেলার ভিটিকান্দি ইউনিয়নের দাশকান্দি গ্রামে।

শ্বশুর আব্দুল মান্নানের পরিবারের ঘরজামাই হলেও টিপুর গত কয়েক বছরের সম্পদ-স্ফীতি এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, এলাকাবাসী এখন নামমাত্র আড়ালও রাখছে না।

অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলের বড় নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে টিপু রাজউক থেকে লুটে নিয়েছেন শত কোটি টাকা। আর সেই টাকার স্রোতেই নাকি তিনি শ্বশুরবাড়ির এলাকায় গড়ে তুলছেন বিশাল দখলদারি।

স্থানীয়দের দাবি, তিনি তার স্ত্রী লাকি আক্তারের নামে ১০ থেকে ১৫ বিঘা জমি কিনেছেন। আবার ওই জমি নিজের ভাইয়ের মতো শ্বশুরের কাছ থেকেও নাকি কয়েক বিঘা দখলে নিয়েছেন। জমি বালু দিয়ে ভরাট করে এখন নির্মাণ করছেন বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স, যার নির্মাণ ব্যয়, মিস্ত্রির মজুরি, সামগ্রিক কাঠামো সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের কল্পনাতীত অঙ্কে পৌঁছেছে।

নির্মাণ শ্রমিকদের কথায়, শুধু মিস্ত্রি বিলই নাকি আটাশ লাখ টাকার মতো। দুইতলা ভবনের নিচে যে অঢেল টাকা গচ্ছিত হচ্ছে, সেই হিসাব করা সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে।

https://bhorernotunbarta.com/wp-content/uploads/2025/11/VID-20251108-WA0055.mp4

বাড়ির চারপাশ ঘিরে স্থানীয়দের ভয়, সন্দেহ আর ক্ষোভ প্রতিদিন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। চায়ের দোকানের আড্ডায় কেউ বলছে, “রাজউকে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে কেউ এমন বাড়ি তুলতে পারে?” আরেকজন বলছে, “আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ছিল তার দাপট। মান্নানের মেয়ের জামাই টিপু এখন আমাদের গ্রামের গডফাদার।”

অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কুমিল্লা ২ (হোমনা- তিতাস) আসনের সাবেক এমপি সেলিমা আহমাদ মেরির সঙ্গে টিপুর ছিল গভীর রাজনৈতিক সম্পর্ক। এই সম্পর্ককেই নাকি তিনি ঢাল-তলোয়ার বানিয়ে রাজউকে বেপরোয়া ক্ষমতাচর্চা করেছেন।

শুধু তাই নয়, নিজের ছোট ভাই সাইদুর আলম অপুকে নৌকার প্রার্থী ঘোষণা করিয়ে ঘারমোড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরাসরি রাজনৈতিক মাঠে নামিয়েছিলেন টিপু। এমপি মেরির রাজনৈতিক প্রভাবকে আরও প্রসারিত করাই ছিল তার প্রকাশ্য উদ্দেশ্য।

এই বিষয়ে বদিউল আলম টিপুর মন্তব্য জানতে একাধিকবার তাকে ফোন করা হয়, মেসেজ পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি কোনো কল রিসিভ করেননি, বার্তারও কোনো উত্তর দেননি। ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

প্রিন্ট করুন