খানসামা-চিরিরবন্দরের ত্রাস: বালু, ঠিকাদারি ও মাদক সিন্ডিকেটে মহাসচিব তুহিন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দিনাজপুর-৪ (খানসামা-চিরিরবন্দর) আসনে বিএনপির রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নাম রবিউল ইসলাম তুহিন। বিএনপির বর্তমান উপজেলা মহাসচিব পদে থাকা এই ব্যক্তি এখন শুধু রাজনীতিক নন, পুরো এলাকার আলোচিত-সমালোচিত এক ক্ষমতাধর নাম।
রাজনৈতিক প্রভাব, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, বালুখেকো সিন্ডিকেট এবং সাম্প্রতিক সময়ে মাদক ব্যবসার অভিযোগেও উঠে এসেছে তার নাম।
প্রশাসনের পাপেট নাকি বিএনপির ‘ডন’?
উপজেলার অনেক তৃণমূল নেতাকর্মীর অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে দলীয় কর্মীরা পর্যন্ত তুহিনের নির্দেশ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাকে ‘ছায়া ইউএনও’ বলেও কটাক্ষ করা হয় অনেকে। একজন তৃণমূল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা মনে করি, তুহিনই এখন উপজেলা প্রশাসন। যার কথায় প্রকল্প হয়, আবার যার ইচ্ছায় বাতিল।”
আওয়ামী লীগের ছায়ায় বিএনপির সিন্ডিকেট?
অবাক করা তথ্য হলো—তুহিন বিএনপির নেতা হলেও আওয়ামী লীগ আমলে ঠিকাদারি ব্যবসায় তার উত্থান। সাবেক মন্ত্রীর এপিএস সালাউদ্দিন এবং আওয়ামী লীগের নেতা শাহনেওয়াজ টেংকুর ঘনিষ্ঠতা দিয়ে পুরো খানসামার ঠিকাদারি কাজ নিজের দখলে নেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, এসব উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, রাস্তা, কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজ—সবখানেই তুহিনের একচ্ছত্র প্রভাব। আওয়ামী লীগের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সফিউল আযম চৌধুরী লায়নের ছায়ায় গড়ে ওঠে ‘লায়ন-তুহিন সিন্ডিকেট’। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তুহিন অল্প সময়ে গড়ে তুলেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
রাজনীতি না ব্যবসা?
বর্তমানে তুহিন রাজনীতির চেয়ে ব্যবসায়িক প্রভাব খাটাচ্ছেন বেশি বলে অভিযোগ অনেকের। ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের বিভিন্ন বিতর্কিত নেতাকর্মীদের আর্থিক বিনিময়ে পুনর্বাসন করছেন পাকেরহাটের ‘লায়ন গ্রুপে’। অথচ বিএনপির ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীরা এখনো অবহেলিত, অনেকে বছরের পর বছর কারাভোগ করেছেন, কেউ কেউ রাজনীতি থেকেই সরে গেছেন।
একজন ত্যাগী নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যে নেতা আওয়ামীদের বসিয়ে ব্যবসা করান, আর নিজের দলের নেতাদের দেখতেও চান না, তিনি আসলে কোন আদর্শে বিশ্বাসী?”
মাদক সিন্ডিকেটের নতুন খেলোয়াড়?
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে মাদকের রাজ্য তৈরি নিয়ে। এলাকার কয়েকটি সূত্র দাবি করেছে, তুহিন এখন নতুন করে একটি মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাদক এনে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তরুণদের মাঝে। স্কুল-কলেজপড়ুয়া যুবকরা এই সিন্ডিকেটের সহজ টার্গেট।
একজন অভিভাবক বলেন, “আমার ছেলেটা আগে ঠিক ছিল, এখন বন্ধুদের সাথে মাদক নেয়। কে জড়িত, আমরা সবাই জানি, কিন্তু কেউ মুখ খুলতে সাহস পাই না।”
এমপি স্বপ্নে ছায়া পড়া
এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যিনি পরিচিত, সেই আক্তারুজ্জামান মিঞার রাজনৈতিক পথেও ছায়া ফেলেছেন মহাসচিব তুহিন। অনেকের অভিযোগ, দলের মধ্যে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে তুহিন নিজেই হয়ে উঠেছেন প্রধান নিয়ন্ত্রক। নির্বাচনের সময় মনোনয়ন কিংবা মাঠের কর্মপরিকল্পনায় তাকে পাশ কাটিয়ে কিছু করা যেন দুঃসাধ্য।
অভিযুক্তের বক্তব্য নেই
এই প্রতিবেদন তৈরির অংশ হিসেবে রবিউল ইসলাম তুহিনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার বক্তব্য পাওয়ার চেষ্টা এখনো অব্যাহত রয়েছে।