ঘুষে গড়ে উঠেছে ক্যাশিয়ার আমিনুলের ‘সাম্রাজ্য’১২ বছরে নিম্নবিত্ত থেকে শতকোটিপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ক্যাশিয়ার আমিনুল ইসলাম—নামটি এখন অফিসজুড়ে দুর্নীতির প্রতীকে পরিণত।
ঘুষ, চাঁদাবাজি, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ আর প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তিনি গড়ে তুলেছেন এক অঘোষিত সাম্রাজ্য। গত ১২ বছরে নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে আজ তিনি শত কোটি টাকার মালিক।
জানা গেছে, জামালপুরের সরিষাবাড়ীর আওনা ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের খন্দকার খলিলুর রহমানের ছেলে আমিনুল ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের জামালপুর অফিসে যোগ দেন। এরপর থেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষকে অস্ত্র বানিয়ে দ্রুত ফুলেফেঁপে ওঠে তার অবৈধ সম্পদ।
অধিদফতরের প্রকল্পে ফান্ড এলে ঠিকাদারদের নামে চেক ইস্যু করা হলেও, আমিনুলের নির্ধারিত “পারসেন্টেজ” না দিলে সে চেক কখনোই ক্যাশ হতো না।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো অভিযোগ করেছে—কাজ পাওয়ার সময় আগাম ঘুষ, কাজ চলাকালে মাসিক ঘুষ এবং বিল তুলতে হলেও নতুন করে টাকা দিতে হতো। এসব লেনদেনের হিসাব রাখতে আমিনুলের ছিল আলাদা গোপন ডায়েরি।
ঘুষ–বাণিজ্যের পাশাপাশি আমিনুল নিজেই ঢুকে পড়েন ঠিকাদারি ব্যবসায়। জামালপুরের রূপসা এন্টারপ্রাইজ, রিপন এন্টারপ্রাইজ এবং শেরপুরের লুৎফর ও আকরাম হোসেন এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে অংশীদার হয়ে জনস্বাস্থ্যের একাধিক প্রকল্পে কাজ ভাগ করে নেন। স্ত্রী নাছিমা আক্তার শেরপুর অফিসে চাকরির সুযোগে সেখানে-ও তিনি প্রভাব বিস্তার করেন।
দুর্নীতির জোরে নিম্নবিত্তের জীবন থেকে আমিনুলের উত্থান এখন অবিশ্বাস্য। সম্প্রতি দেড় কোটি টাকায় জামালপুর শহরের মুকন্দবাড়ীতে ৮ শতাংশ জমি ও আধা-পাকা বাড়ি কিনেছেন তিনি। শুধু তাই নয়—জামালপুর ও শেরপুর জুড়ে নামে-বেআইনিভাবে কেনা জমি, ব্যাংক ব্যালেন্স, স্বর্ণালংকারসহ বিপুল সম্পদ রয়েছে তার নিজের ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের নামে।
অফিসজুড়ে পরিচিতি পেয়েছেন “সুলতানের মাইম্যান” হিসেবে—অর্থাৎ ক্ষমতাশালী মহলের প্রভাবের ওপর দাঁড়িয়ে অদৃশ্য শক্তির মালিক তিনি।
জনস্বাস্থ্য বিভাগের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিস্তারিত দুদক তদন্ত করলে আরও ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসতে পারে।




