নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপি জনগণের ভোট সমর্থনে ক্ষমতায় যেতে চায় মন্তব্য করে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম বলেছেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলসহ দেশের জনগণ চায় অতিদ্রুত নির্বাচন। কিন্তু কেউ কেউ আবার চান নির্বাচন যেন দেরিতে অনুষ্ঠিত হয়। তবে আমার পরিস্কার কথা; আগামীতে যখনই নির্বাচন হয় সেই নির্বাচনে জনগণের ভোটে তারেক রহমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর হাসপাতাল মোড়ে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম সংসদ ও সামাজিক সংগঠন, হোসেনপুর উপজেলা আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম সংসদ এর প্রধান উপদেষ্টা ও চেতনায় বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফয়সাল সালাম সাগর।
তিনি বলেন, এই দেশ আমাদের। আমরা যারা বিএনপির রাজনীতি করি তাদেরকে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে অনুসরণ করতে হবে। তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যে তার শত্রুর বলতে পারেননি জিয়াউর রহমান দুর্নীতি করেছেন। পরবর্তীতে আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে লড়াই করেছেন। জনগণই তাকে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছন তিন বার। আর আগামী দিনে উনার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা ইস্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাগ করেছেন মন্তব্য করে আবদুস সালাম বলেন, আওয়ামী লীগকে আবার ফিরে আনতে চায়; প্রতিবেশি দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাগ করেছেন; কেন আমরা শেখ হাসিনাকে ভারতে পাঠিয়েছি। কারণ বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তারা(ভারত) শুধু নেয়; বাংলাদেশকে কিছু দিতে হয় না। আমাদের লোকজন চাকুরি পায় না; অথচ ভারতের লোকজন বাংলাদেশে এসে চাকুরি পায়। চাকুরি করে কিন্তু ট্যাক্স দেন না। আবার এসব কথা বলার পর আমরা ভারত বিরোধী হয়ে যাই। আমরা যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি; কারও দয়ায় নয়। তবে ভিারত আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে এটা অস্বীকার করছি না। স্পষ্ট কথা- এটা সিকিম কিংবা ভুটান নয়; এটা বাংলাদেশ। তাই ইচ্ছে করলে যে কেউ এই দেশ দখল করতে পারবে না।
পতিত আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে জাতির এই বীর সন্তান বলেন, যে যাই বলুক রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বড় একটি শক্তি ছিল। আমরা দলটির প্রধানকে বার বার বলেছি; ওইদিকে (বিনাভোট) না যেয়ে নির্বাচনের পথে হাটুন। কিন্তু তিনি ক্ষমতার দম্ভে নির্বাচনের পথে যাননি। আজকে নির্বাচনের মাধ্যমে পরাজয় হলে পিছনের দরজা দিয়ে তাকে ভারতে পালাতে হতো না। ভারতে আশ্রয় নিতে হতো না। তাই বলছি; ক্ষমতা দেখানোর কিছু নাই। ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়; যে কারণে ক্ষমতায় পেয়ে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার যা খুশি তা শুরু করেছিল।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ক্ষমতার দম্ভ কমাতে হবে। জনগণ কি চায় সেটা জানতে হবে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আগামী দিনে ক্ষমতায় যেতে হবে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না যাতে জনগণ বিএনপিকে খারাপভাবে, দোষারোপ করে। বরং দলের নাম ভেঙে যারা অপকর্ম করবেন তাকে বিএনপিতে রাখা হবে না। অপরাধ করলে ইহকাল পরকাল বিচারের আওতায় যেতেই হবে। সবকিছুর বিচার হবে। ইহকাল ক্ষণস্থায়ী পরকাল অন্ততকালের। যারা দম্ভ করে বলত বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দলই নয়; তার নেতা আবার তারেক রহমান। সেই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দম্ভ এখন কোথায়? পালিয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগ যদি অতীত থেকে শিক্ষা নিত তাহলে এমটা হতো না। এমকি যে ক্ষোভে থানায় হামলা, পুলিশের উপর আঘাত তা জনগণের জনরোস।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ৭২ থেকে ৭৫ এই দেশের গণতন্ত্র আওয়ামী লীগ খেয়ে ফেলেছিল। মানুষের মৌলিক অধিকার ছিল না, এমনকি স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টিও ছিল না। না খেয়ে মানুষ বেওয়ারিশ লাশ হয়ে পড়ে থাকত। ইতিহাস থেকে আওয়ামী লীগ শিক্ষা গ্রহণ করে নাই। যদি করতো তাহলে গত ১৫ বছর আগের মতোই নির্যাতনের পথ বেছে নিতো না। স্বাধীনতার পর পল্টন ময়দানে মওলানা ভাষানী বললেন মুজিব তোমার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগকে থামাও। এরা দেশটা লুটপাট করে খাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বললেন- এত কষ্ট করেছে নেতাকর্মীরা; না হয় কিছু খাবে। অথচ খাইতে খাইতে শেখ মুজিবরেও খেয়ে ফেলেছে, দেশটাকেও খেয়ে ফেলেছে। আর ৫ আগস্টের আগে বিএনপি নেতাকর্মীরা বাড়িতে ঘুমাতে পারে নাই, তাদের ব্যবসা বাণিজ্য জায়গা দখল, চাকরি থেকে বিতাড়িত করেছে। মনের মধ্যে তো ক্ষোভ থাকতেই পারে। কিন্তু আমাদের নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছেন, আপনারা এই মুহূর্তে হারানো সম্পদ পুনরুদ্ধার করতে যাবেন না। ফলে আমাদের নেতার নির্দেশে কোথাও কিছু হয় নাই। তাই আওয়ামী লীগ আর বিএনপিকে এক পাল্লায় মাপা যাবে না।
হোসেনপুরবাসীর কাছে নিজের সন্তানকে পরিচয় করে দিয়ে আবদুস সালাম বলেন, আজকেই প্রথম সন্তানকে নিয়ে আপনাদের সামনে এসেছি, কথা বলছি। আমার সন্তানকে হোসেনপুরবাসীর কাছে দিয়ে গেলাম; আপনারা দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন তাকে ভালো মন নিয়ে আপনাদের কাছে জনগণের কাছে আসতে পারে। আর আল্লাহ যেটা চায় সেটা হবে। কপালে লিখন যার যেখানে আছে সেখানে পাবে; কেউ কাউকে আটকাতে পারবে না। আমার সন্তান ভুল করলে আপনারা সংশোধন করে দিবেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে পড়াশোনা করতে হবে। ভালো মানুষের বিকল্প নাই। নেতৃত্ব দিতে হলে অবশ্যই ভালো মানুষ হতে হবে। ভবিষ্যতে যারা দেশ পরিচালনা করবে তাদেরকে সৎ হতে হবে।
হোসেনপুর-পাকুন্দিয়া নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, এই হোসেনপুর-পাকুন্দিয়ার এমন কোনো গ্রাম নাই যে গ্রামে আমি যাইনি। এখানে সবাই আমার আপনজন। এখানেই আমি বড় হয়েছি। এই বাংলাদেশ একটা বিশাল সম্পদের দেশ। ইচ্ছা করলে আমরা দেশ ভালো রাখতে পারি। যদি নেতৃত্ব ভালো হয়। তবে তথাকথিত কিছু শিক্ষিত লোকদের জন্য আজ দেশের এই অবস্থা। তারা এখন শুধু সংস্কার সংস্কার দাবি তুলছেন। অথচ সংষ্কার করতে কেউ মানা করেনি। কিন্তু সংস্কারের নামে যদি ধীর্ঘদিন সময় নেন তা হবে না। ভারত বাণিজ্যের নামে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা সব ব্যাংক লুট করেছে। জনগণ আজ ভোগান্তির মধ্যে আছে; নিত্যপণ্য দাম কমে না। কারণ ডলার নাই। ডলার কিনতে হয় বেশি টাকা দিয়ে, যে টাকা বাংলাদেশের নাই।