আল্লাহ আপনি কুমিল্লা দক্ষিণের মানুষের সহায়ক হোন: মনিরুল হক চৌধুরী
ডেস্ক রিপোর্ট:
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪তারিখর রোজ শনিবার বিকেল ০৩.৩০ মিনিটে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে সাবেক ২৫৬ কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা পুনঃবহালের দাবীতে লক্ষাধীক জনতার উপস্থিতি এই বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত জনসভায় প্রধান অতিথী হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাবেক সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মনিরুল হক চৌধুরী এ সময় তিনি বলেন, অবৈধ হুূাদা কমিশন – লোটাস কামাল সহ আওয়ামী লীগের চক্রান্তের স্বীকার আজ আমার এলাকার মানুষ। শেখ হাসিনা সেদিন নির্বাচন কমিশনকে বলেছিলেন লোটাস কামাল যেভাবে চায় সেই ভাবে করে দেন। বিগত দিনের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
আজকে আমি এই জনসভা থেকে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও নির্বাচন কমিশনকে বলবো আপনারা দুজনই ভাল মানুষ। মানুষের পাশে থাকুন কুমিল্লা দক্ষিণের মানুষের পাশে দাড়ান। আওয়ামী লীগ ও তৎকালীন হুদা কমিশনের একগুয়েমি সিদ্ধান্তের বিভিন্ন দিক বলতে গিয়ে বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, “এই বিচার আমরা কার কাছে দিবো- আল্লাহ আপনি কুমিল্লা দক্ষিণের মানুষের সহায় হোন” আমার দক্ষিণের মানুষকে বলব সময় এসেছে প্রতিবাদ করার আপনারা যার যার অবস্থান থেকে সব নিয়ে আমার আপনার ঠিকানা কুমিল্লা-৯ ফিরিয়ে আনতে প্রতিবাদে এগিয়ে আসুন । এই লড়াই আমাদের অস্তিত্বের লড়াই।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বি এন পির সভাপতি এডভোকেট আখতার হুসাইন বক্তব্যে বলেন, আজকে আমরা সাবেক এই আসন ফিরিয়ে আনতে সবাই ঐক্যবদ্ধ, আমরা দীর্ঘদিন বৈষম্যের স্বীকার ছিলাম- সময় এসেছে আমাদের প্রাণের ঠিকানা কুমিল্লা -৯ ফিরিয়ে আনার।আমাদের এই ভৌগোলিক সীমানা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনে রক্ত দিব। প্রবীণ বিএনপি নেতা শাহাজান মজুমদার বলেন, আজকে এই লক্ষ মানুষের একটাই দাবি আমাদের ঠিকানা আমাদেরকে ফিরিয়ে দিতে হবে – প্রয়োজনে আমরা রাজপথে রক্ত দিবো, জীবন দিব।
প্রসঙ্গত এই আসনের বিএনপির সাবেক সাংসদ মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, বিগত ২০০৮ সালে ৮৪টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের কথা বলা হলেও বাস্তবে ৩শ’ আসনের মধ্যে ১৩০টিরই পুনর্বিন্যাস করা হয়েছিল আইন লঙ্ঘন করে অসৎ উদ্দেশ্যে। আঞ্চলিক অখণ্ডতাভিত্তিক প্রশাসনিক সুবিধা বিবেচনায় না এনে শুধু জনসংখ্যাকেই গুরুত্ব দিয়েছিল।
সে-সময় প্রায় ৪ হাজার আপত্তি পড়লেও তা আমলে নেয়নি তৎকালীন কমিশন। এভাবে আসন ব্যাপক রদবদল করার ফলে সারা দেশে বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বঞ্চিত হয়েছে গ্রামাঞ্চলের জনগণ। বঞ্চিত হয়েছি আমরা কুমিল্লা দক্ষিণের মানুষ । ২০০৮ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়কের সময়ে অসৎ উদ্দেশ্যে আসন বিন্যাস করতে গিয়ে পুরো দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির উদ্ভব করেছিল তৎকালীন হুদা কমিশন।
১৯৭৩ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সারা দেশের সংসদীয় আসনগুলো একইরূপে থাকলেও ২০০৮ সালে এসে হঠাৎ করে ব্যাপক রদবদল আনে তৎকালীন কমিশন। ফলে ঐতিহ্যবাহী আসনগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো করা হয়। যেসব আসনে দীর্ঘদিন ধরে সেনা-সমর্থিত সরকার ও তার সমর্থকদের বিপক্ষের রাজনীতিকরা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল কেবল সেসব আসনই পুনর্বিন্যাস করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে কোনো আপত্তি বা মামলা আমলে নেয়নি তৎকালীন কমিশন। যদিও আসনগুলো পুনর্বিন্যাস করার জন্য অসংখ্য আবেদন জমা পড়েছিল কমিশনে। অধিকাংশ আবেদনে বলা হয়েছে, একটি বিশেষ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কমিশন সীমানা পুনর্বিন্যাস করে। এতে একটি রাজনৈতিক দলই বেশি লাভবান হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জনগণ।
১৯৭৬ সালের সীমানা নির্ধারণ অধ্যাদেশের ৮ ধারায় বলা হয়েছে, ‘আদমশুমারির অব্যবহিত পর অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনের জন্য পুনরায় আসনসমূহের সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। ৬ ধারায় বলা আছে, আঞ্চলিক ভিত্তিক প্রশাসনিক সুবিধার বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে এবং তা করতে গিয়ে যতদূর সম্ভব সর্বশেষ আদমশুমারির প্রতিবেদনের জনসংখ্যার বিভাজনও বিবেচনায় রাখতে হবে’। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, আসন পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে ১৯৭৬ সালের সীমানা নির্ধারণ অধ্যাদেশ অমান্য করেছিল বিগত কমিশন। কমিশন সেই আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছিল।
যে ১৩০টি আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়েছিল সেসব এলাকা থেকে ২০০৮ সালের জুনের দিকে ৩ হাজার ৬৯০টি আপত্তি জমা পড়ে। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার আপত্তিগুলো আমলে নেয়নি কমিশন। পরে শুনানি শেষে সীমানা পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত ১৯৭৬ সালের অধ্যাদেশ এর ধারা ৬ (৪) অনুযায়ী আপত্তিগুলো খারিজ করে ১৩০টি সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে ২০০৮ সালের ১০ই জুলাই গেজেট প্রকাশ করে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৫ (ক) অনুযায়ী, সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার সীমা নির্ধারণ কিংবা অনুরূপ নির্বাচনী এলাকার জন্য আসন বণ্টন সম্পর্কিত যেকোনো আইনের বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপিত করার সুযোগ নেই। তবে সীমানা পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত ১৩টি মামলা হয়।
জনসভায় সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন মজুমদারের সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা বি এন পির সভাপতি এডভোকেট আখতার হুসাইন, সদস্য সচিব ওমর ফারুক চৌধুরী, আমান উল্লাহ চেয়ারম্যান, ওমর ফারুক সুমন চেয়ারম্যান, লালমাই উপজেলা বি এন পির সভাপতি মাসুদ করিম, সদস্য সচিব ইউসুফ আলী মীর পিন্টু, আমান উদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর জামাল হোসেন, জামাল উদ্দিন, দেলোয়ার হোসেন সহ সদর দক্ষিণ, লালমাই উপজেলার লক্ষাধীক জনগণ।