নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকা থেকে শুরু করে ঝালকাঠি—প্রকৌশলী মোঃ আমান উল্লাহ সরকারের পেশাগত জীবন যেন দুর্নীতির মহাসড়ক। সাবেক দায়িত্বকালে ভয়াবহ লুটপাটের অভিযোগের পর বর্তমানে ঝালকাঠি গণপূর্ত বিভাগেও তার বিরুদ্ধে নতুন করে অর্থ আত্মসাতের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে।
২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর তিনি ঝালকাঠি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। নতুন কর্মস্থলে এসেই পুরনো কৌশলে শুরু হয় বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রকল্প লুটপাট। স্থানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ, প্রকল্পের চাহিদার চেয়ে তিনগুণ বেশি বরাদ্দ এনে কাজ না করেই বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করছেন।
স্বাস্থ্য শিক্ষা, নির্মাণ ও সংস্কার খাতে মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের প্রভাব খাটিয়ে অধিক বরাদ্দ এনে তা ৩-৪ জন ‘নিজস্ব ঠিকাদার’-এর মাধ্যমে তছরূপ করছেন। চেক পৌঁছে যাচ্ছে তার নিজ বাসভবনে।
তবে ঝালকাঠিতে তার এই দুর্নীতির গল্পের শুরু নয়—এর আগে ঢাকায় দীর্ঘসময় দায়িত্ব পালনের সময় একাধিক ভয়াবহ কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে পড়ে এই প্রকৌশলীর।
ঢাকার মহাখালী গণপূর্ত বিভাগে কর্মরত অবস্থায় তিনি একই প্রকল্পের জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে দুইবার বরাদ্দ এনে ‘ডাবল বিল’ পাশ করেন।
এতে করে অন্তত ৪৫টি প্রকল্পে একাধিকবার বিল উত্তোলন করে কোটির ওপর সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেন।
উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল:
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ডাক্তার হোস্টেল, বারান্দা ও টয়লেট নির্মাণ।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন ব্লকে টাইলসকরণ, পানির লাইন, স্যানিটারি ফিটিংস, করিডোর সংস্কার ও নতুন কক্ষ নির্মাণ।
এসব প্রকল্পের অনেক কাজই পূর্বে সম্পন্ন হলেও, কৌশলে সেগুলো পুনরায় নতুন প্রকল্পে ঢুকিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ এনে বিল উত্তোলন করা হয়।
মহাখালী নার্সিং কলেজের সামনের রাস্তা উন্নয়নের নামেও ঘটে এক নজিরবিহীন অর্থ আত্মসাত। বরাদ্দ ছিল ৭ কোটি টাকা, কাজ হয় মাত্র ৬০-৭০ লাখ টাকার। বাকি টাকা ভাগাভাগি করে নেয় ঠিকাদারদের সঙ্গে।
দুর্নীতির বিস্তার কেবল প্রকল্পে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ক্ষমতার অপব্যবহারেও তিনি ছিলেন দাপুটে। প্রায় এক দশক ধরে ঢাকাতেই অবস্থান করেছেন।
মাত্র তিন মাসের জন্য বাইরে বদলি হলেও, সাবেক সচিবকে ম্যানেজ করে ফের ঢাকায় ফিরে আসেন। প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।
সূত্র জানায়, ঢাকায় তার নামে অন্তত ৫টি প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে। পরিবারভিত্তিকভাবে তিনি বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্ট। নিজে বুয়েট পড়াকালে ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। রাজনৈতিক অবস্থান পাল্টে বিভিন্ন সরকারের আমলেই তিনি নিজের প্রভাব বিস্তার করে গেছেন, সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অর্থকেও করেছেন জিম্মি।
ঝালকাঠিতে বদলি হয়ে তিনি নতুনভাবে দুর্নীতির জাল বিস্তার শুরু করেছেন। স্থানীয় ঠিকাদাররা তার একতরফা নিয়ন্ত্রণে অতিষ্ঠ। প্রকল্প বিলের নামে চেক ও হিসাব সবই নির্দিষ্ট একটি চক্রের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
জনপ্রশাসন ও দুদক সূত্রে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে একাধিক লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। তবে প্রভাবশালী পরিচয়ের আড়ালে এখনো বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন এই প্রকৌশলী।
চলবে….