বগুড়া সওজে অনিয়ম-দুর্নীতির খলনায়ক আবুল মনসুর আহমেদ | ২য় পর্ব

নিজস্ব প্রতিনিধি
বগুড়ার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগে দুর্নীতির নতুন অধ্যায়ের নাম—আবুল মনসুর আহমেদ। ৩১তম বিসিএস ক্যাডারের এই নির্বাহী প্রকৌশলী ২০২৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বগুড়ায় যোগদানের পর থেকেই জেলা জুড়ে শুরু হয় একের পর এক অনিয়ম, টেন্ডার কারসাজি আর ভয়ঙ্কর কমিশন বাণিজ্য।
সূত্র বলছে, পাবনায় দায়িত্ব পালনকালে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একটি অংশের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে তিনি তৈরি করেন ভাগ-বাঁটোয়ারার গোপন সিন্ডিকেট। সরকারি প্রকল্পের দরপত্রে দুর্নীতি, নির্দিষ্ট ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের কমিশন—এই ছিল তার পুরনো প্যাটার্ন।
পাবনা শহর উন্নয়ন প্রকল্প, আটঘরিয়া বাইপাস এবং ঈশ্বরদী রেলক্রসিং সড়ক সংস্কারের মতো একাধিক প্রকল্পে কাজ না করেই বিল উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্পের কাজ অর্ধেক হলেও বিল হয়েছে শতভাগ। প্রতিটি টেন্ডারে আগে ভাগে ঠিকাদার নির্ধারণ করে রাখা, কমিশনের অঙ্ক লিখিত বা মৌখিকভাবে নির্ধারণ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
স্থানীয় এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, “আবুল মনসুর স্যারের টেবিলের চেয়ে মোবাইলের WhatsApp গ্রুপে বেশি ফাইল চলে। সেখানে ঠিকাদার, কিছু সহকারী প্রকৌশলী আর সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঠিক করেন কে কোন প্রকল্প পাবে, আর কে কতো টাকা দেবে।”
এই কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বগুড়ায় নিজের পদায়ন নিশ্চিত করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, “পাবনায় কমিশনের টাকা বাগিয়ে যে সম্পদ করেছে, তা ঢাকা-সাভার-নবীনগরে অন্তত চারটি বাড়ি আর দুটি প্লট কিনে প্রমাণ রেখেছে। বগুড়ায় এসে সেই দুর্নীতির জাল আরও প্রশস্ত হয়েছে।”
বগুড়ায় যোগদানের পরপরই একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন, পুরনো কাজের বিল আটকে রাখা, অযথা টেন্ডারে বাধা দেওয়া, নিজের পছন্দের ঠিকাদার ছাড়া কাউকে কাজ না দেওয়ার মতো একচ্ছত্র দখলদারিত্ব শুরু করে দেন তিনি।
উল্লেখযোগ্যভাবে, বগুড়া সদর, কাহালু, শিবগঞ্জ ও নন্দীগ্রাম এলাকায় চলমান একাধিক সড়ক সংস্কার প্রকল্পে কাজের মান নিয়ে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে এক মাসের মধ্যেই, ড্রেনেজ কাজের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ গায়েব, কিন্তু ঠিকাদারদের বিল পাশ হচ্ছে দ্রুত গতিতে।
এই কর্মকর্তা সম্পর্কে সওজের এক সাবেক কর্মকর্তা বলেন, “আবুল মনসুর হলো সেই ধরনের প্রকৌশলী, যে নিজেই ‘দরপত্রের কমিশন নির্ধারক’।
চলবে…