যে পাপের শাস্তি ভোগ করতে হবে দুনিয়াতেই
মানুষের জীবনে পাপ ও পুণ্যের হিসাব যেন এক অদৃশ্য পাল্লা। সাধারণত বিশ্বাস করা হয়, কর্মের শাস্তি বা প্রতিদান কেবল পরকাল বা আখিরাতেই মিলবে।
কিন্তু ইসলামের শিক্ষা হলো, কিছু গুনাহ এমন রয়েছে যার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া বা শাস্তি মানুষ এই দুনিয়াতেই ভোগ করে। কোরআন ও হাদিসের বর্ণনা অনুসারে, এসব পাপের ইহকালীন পরিণতি কঠিনভাবে নেমে আসে অশান্তি, ধ্বংস, অনিষ্ট, অপমান অথবা দুর্ভাগ্যের বোঝা হয়ে।
ইহকালকে মুমিনের জন্য পরীক্ষার মঞ্চ বলা হয়। এই মঞ্চে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চললে রয়েছে জান্নাতের আশ্বাস, আর অবাধ্যতা ডেকে আনে আজাব। তবে নির্দিষ্ট চারটি পাপের পরিণতি সম্পর্কে হাদিস ও কোরআনে বিশেষ সতর্কতা দেওয়া হয়েছে:
১. মাতা-পিতাকে অবহেলা: দুনিয়ার জীবনেই ধ্বংস অনিবার্য
পিতা-মাতার অবাধ্যতা বা তাদের প্রতি অবহেলা করাকে গুরুতর পাপ হিসেবে দেখা হয়।
শাস্তির ঘোষণা: হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) তিনবার বলেছিলেন, “ওই ব্যক্তির নাক ধুলিমলিন হোক, সে ধ্বংস হোক।”
কারণ: সাহাবাদের প্রশ্নে তিনি বলেন, সে হলো সেই ব্যক্তি—যে বার্ধক্যে পিতা-মাতাকে পেল, তবুও তাদের সেবা করে জান্নাতে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন করতে পারলো না।
পরিণতি: মা-বাবার অবাধ্য হলে তার অকল্যাণ এবং ধ্বংসের শুরু হয় এই দুনিয়া থেকেই।
২. সতী নারীর প্রতি অপবাদ: দুনিয়া–আখিরাত দুই জীবনই অভিশপ্ত
নিরপরাধ ও পবিত্র নারীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের মিথ্যা অপবাদ বা অপপ্রচার চালানো ভয়াবহ অপরাধ।
কোরআনের নির্দেশ: পবিত্র কোরআন জানায়, এ ধরনের অপরাধের শাস্তি অত্যন্ত ভয়ংকর।
পরিণতি: এহেন কাজে অভিশাপ নেমে আসে দুনিয়াতেও, আখিরাতেও। সমাজে বাড়ে অস্থিরতা এবং ব্যক্তিগত জীবনে নেমে আসে অবনতি ও দুর্ভাগ্য।
৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা: তাত্ক্ষণিক আজাবের ঘোষণা
আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বের বিষয়। এই সম্পর্ক ছিন্ন করা মারাত্মক পাপ।
হাদিসের সতর্কবাণী: হাদিসে এসেছে, বিদ্রোহী ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ দুনিয়াতেই শাস্তি দেন, আখিরাতের শাস্তি পর্যন্ত তা মুলতবি রাখেন না।
কোরআনের ঘোষণা: যারা পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে ও আত্মীয়তার বন্ধন কেটে ফেলে, তাদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত নেমে আসে; তাদের কান বধির হয়ে যায় এবং দৃষ্টি অন্ধ হয়ে পড়ে।
৪. ব্যভিচার (যিনা): আত্মিক শক্তি ও ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়
ব্যভিচার ইসলামে অন্যতম জঘন্য পাপ। এর প্রভাব মানুষের আত্মিক অবস্থার ওপর তাৎক্ষণিকভাবে পড়ে।
ঈমানের অবস্থান: হাদিসে বলা হয়েছে, যখন মানুষ ব্যভিচারে লিপ্ত থাকে, তখন ঈমান তার অন্তর থেকে বেড়িয়ে মাথার ওপর ছায়ার মতো অবস্থান করে।
পুনরুদ্ধার: পাপ কাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে ফিরে এলে এবং তওবা করলেই তবে ঈমান আবার অন্তরে ফিরে আসে।
তাৎক্ষণিক ক্ষতি: এই গুনাহ মানুষের আত্মিক শক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল করে দেয়।
ইসলাম শিক্ষা দেয় যে, পাপ কখনোই অদৃশ্য হয়ে যায় না। বিশেষ করে উপরোক্ত এই জঘন্য পাপগুলোর শাস্তি অনেক সময় জীবনের মধ্যেই অশান্তি, অপমান, দুর্ভাগ্য বা সম্পর্কের ভাঙন হয়ে নেমে আসে।
ইহকালীন ও পরকালীন কঠিন পরিণতি থেকে বাঁচতে হলে এই পাপগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে এবং আল্লাহর ভীতি (তাকওয়া) ও ইসলামী নীতিতে জীবন গড়ার বিকল্প নেই।




