
দৈনিক ভোরের নতুন বার্তা
দৈনিক ভোরের নতুন বার্তা
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে পৈশাচিক কায়দায় উস্কানী প্রদান ও অর্থযোগান দাতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিল। আওয়ামী ম্যান” পরিচয়ে বিগত সরকারের শাসনামলে বিশেষ সুবিধা গ্রহণ, নিজস্ব ঠিকাদারদের সমন্বয়ে সিন্ডিকেট গঠন, কাজ না করে ভূয়া বিল ভাউচার করে বিল উত্তোলন, বহিরাগত লোক দিয়ে অফিসে কাজ করানো,
অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ অর্জনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে গণপূর্ত অধিদপ্তরে কায়কোবাদ ও প্রকৌশলী তামজীদ হোসেনের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি অভিযোগ থাকলেও আইন কে থোরাই কেয়ার করে রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
বিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে জানাগেছে, গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের শেষের দিকে নির্বাহী প্রকৌশলী তামজিদ হোসেন চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন।ওই সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন পৈশাচিক কায়দায় দমনে উস্কানী প্রদান ও অর্থায়ন করার অভিযোগ ছিল তামজীদের বিরুদ্ধে। সরকার পতনের পর জনগণের রোষানলে পড়ে তাঁর চট্টগ্রামে থাকা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
অবস্থা বেগতিক দেখে বিপুল অর্থযোগে তদবির করে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই/এম সার্কেল-২ এর অধিনে ই/এম বিভাগ-৫ এ বদলি হয়ে আসেন। তামজীদের ঢাকায় বদলি হওয়ার ক্ষেত্রে গণপূর্ত অধিদপ্তরের
ই/এম সার্কেল-২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কায়কোবাদ সহযোগিতা করেছেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করেছে। নানা দুর্নীতির অভিযোগ থাকা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: কায়কোবাদ চট্টগ্রামে দায়িত্বরত থাকাকালীন তামজীদ তাঁর অধীনে কর্মরত ছিলেন।
ওই সখ্যতার মাধ্যমে একান্ত অনুগত হয়ে ওঠা শিষ্যকে নিজের সার্কেলের অধীনে এনে সেন্ডকেটটি শক্তিশালী করে গড়ে তোলেন। তামজিদ একা ঢাকায় বদলি হয়ে আসেননি। তাঁর সঙ্গে চট্টগ্রামের একাধিক আস্থাভাজন ঠিকাদারদেরও নিয়ে এসেছেন। গড়ে তুলেছেন নিজস্ব বলয় দুর্নীতি বাজ ঠিকাদার সিন্ডিকেট। বিশেষকরে তাঁর ক্যাডার খ্যাত মিঠুনকে চট্টগ্রাম
থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। বিদ্যমান আইনের বিধি লঙ্ঘন করে মিঠুনকে অফিসে বসিয়ে কাজ করাচ্ছেন। মিঠুন অফিসে রুম বরাদ্দ দিয়ে কাজ করানোর কারণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সর্বস্তরের কর্মচারীগণ।
এদিকে ওই ঘটনার জেরে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ই/এম বিভাগ-৫ এর সংক্ষুব্ধ ১০ জন কর্মচারী নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। আবেদনে তারা মিঠুনকে অফিস থেকে বের করে দিয়ে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান। আবেদন করার পর কর্মচারীদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে
উল্টো মিঠুনকে অফিসে বহাল রেখেছেন। অভিযোগকারীদের উপর চড়াও হওয়ায় তামজীদ এর স্বেচ্ছাচারিতা দৃশ্যমান হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী বলেন,আমরা অভিযোগ করার কারনে মিঠুন ও তামজিদ হোসেন আমাদের বদলি,বরখাস্ত করাসহ নানাবিধ হয়রানির হুমকি দিয়ে আসছিল।
এবিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্যে গণপূর্ত উপদেষ্টা, সচিব ও প্রধান প্রকৌশলীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ই/এম বিভাগ ৫ এর সংক্ষুব্ধ কর্মচারিগণ। তামজিদ হোসেন আওয়ামী পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১৩ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তরে যোগদান করেন। একটি বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন। চাকরির শুরু থেকে আওয়ামী রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভোল পাল্টে সুযোগ সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করছেন।
তামজিদ হোসেন প্রায় এক যুগ চাকুরি জীবনে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে প্লট, ফ্ল্যাট,গাড়িসহ অঢেল বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন বলে একটি সূূত্র দাবি করছেন। তার অর্জিত সম্পদ জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। তামজীদ হোসেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের জাতীয় পরিচয় পত্রের
বিপরীতে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক অনুসন্ধান করলে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের সন্ধান পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্ট মহল দাবি করছেন। ২০১৩ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত তামজীদ হোসেনের বিশদ আমলনামার বিষয়ে ধারাবাহিক ভাবে প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, এ বিষয়ে আমাদের সংবাদ এজেন্সি নিউজ ব্যুরো অব বাংলাদেশের অনুসন্ধান টিম নিরলসভাবে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।
এবিষয়ে তামজীদ হোসেন এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
গণপূর্ত অধিদপ্তরের শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুল ইসলামের নামে আবারও সরকারি বিদ্যমান আইন বিধি ভঙ্গ করার অভিযোগ উঠেছে। তার স্ত্রী কানিজা মুস্তারিনার নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরেই পরোক্ষভাবে ঠিকাদারী করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও ঠিকাদারদের ১০ শতাংশ কমে দরপত্রে অংশগ্রহণ করার জন্য দরতপত্রের রেট কোটেশন বিক্রিরও অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে জাহিদুর রহমান এবং আতিকুল ইসলামের স্ত্রী কানিজা মুস্তারিনা মিলে “Adroit Consultants and Engineers” নামে একটি যৌথ প্রতিষ্ঠান গঠন করেন।
যেহেতু সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী নিজ পোষ্য নিজ আওতায়ধীন এলাকায় কোনব্যবসায় জড়িত হতে পারবে না তাই সিটি কর্পোরেশন ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন, এনলিস্টমেন্ট, রেজিস্ট্রেশনসহ সব কাগজপত্রে স্ত্রী কানিজার নাম গোপন রাখেছেন আতিক।
এদিকে সরকারি e-GP পোর্টালে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে- Adroit Consultants & Engineers নামে ফার্মটি এককভাবে ১৬৭টি কাজ পেয়েছে, যার অধিকাংশই পেয়েছে নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ এবং ঢাকাইএম বিভাগ–৯ থেকে।
এই দুটি বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলীরা প্রায় সবাই “আতিক সিন্ডিকেটের” সদস্য বলে পরিচিত। ইজিপি পোর্টালে প্রাপ্ত তথ্য মতে এখন পর্যন্ত এই ঠিকাদারি ফার্মের একক নামে প্রায় ১৬৯টি কাজের তথ্য পাওয়া গেছে যার কন্ট্রাক্ট মূল্য প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। কাজগুলোর মোট মূল্য প্রায় ৭৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
সূত্রমতে, এই ১৬৯টি কাজের মধ্যে ১৫৭টি কাজের মধ্যে ১৩২টি কাজই পিপিআর এর নিয়ম ভঙ্গ করে একক দরদাতার মাধ্যমে ওয়ার্ক অর্ডার প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া জয়েন্ট ভেঞ্চার এর মাধ্যমে যে ৭টি কাজের তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলোর মূল্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ সবমিলিয়ে প্রায় ১৪০ কোটি টাকার কাজ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অনিয়মের আশ্রয় নেয়া টেন্ডার আইডিসমুহ হচ্ছে-
১৪৭৩০৩, ১৪৭৩০৫, ১৫৬০০০, ১৬০০৯০, ১৬৪৫৮২, ১৭১৭৫৯, ১৭৬২৬৬, ১৯৩৪৭০, ২০৪৬৬০, ২০৯৪৫৩, ২০৯৪৫৪, ২১০৭২২, ২১০৭২৮, ২১০৮৪৯, ২১০৮৮১, ২২৬৬৯০, ২৭৪৪৬২, ৩১৮৭৩০, ৪৩২৫০২, ৪৩২৫০৪, ৪৩৩৭১৫, ৪৩৫৮৫৭, ৪৩৭৯৭০, ৪৫৬৫২৭, ৪৫৯৭১৬, ৪৬০১৭৮, ৪৬০৮১৭
৪৬০৮৪১, ৪৬১০৯৯, ৪৬২০১৪, ৪৬২২১৮, ৪৬২২১৯, ৪৬২২২০, ৪৬২২২১, ৪৬২২২২, ৪৬২২২৪, ৪৬২২৩৭, ৪৬২২৪৬, ৪৬২২৫৩, ৪৬২২৫৫, ৪৬২২৬১, ৪৬২৯৪৮, ৪৬৬২৫৮, ৪৬৭৩৬৭, ৪৬৭৩৭৭, ৪৬৯২১৮, ৪৬৯৬২৫, ৪৬৯৮৮৫, ৫১৩৯০৭, ৫২৩৬০৫, ৫২৩৬০৬,
৫২৩৮৩২, ৫২৩৮৩৩, ৫২৬৭৮৬, ৫২৬৭৮৯, ৫২৬৮৩২, ৫২৯৫৬০, ৫২৯৮৮৬, ৫৩০৬৪৮, ৫৩০৬৫৩, ৫৪৩৭৮৬, ৫৫২৫২৭, ৫৫২৫৪০, ৫৫৬৫৮৪, ৫৫৬৮৫৭, ৫৬১৬৫০, ৫৬১৯১৩, ৫৬৩৬৭৭, ৫৬৩৬৭৭, ৫৬৭১৩০, ৫৬৭১৫৮, ৫৬৮০৬৮, ৫৭২৯৮৯, ৫৭৪৪১৮, ৫৭৪৪৩২, ৫৭৫৫৮২, ৫৭৫৫৮৬, ৫৭৮১১৫, ৫৮০৩০৮, ৫৮১৩৮৬, ৫৮৩৪১৪
৫৮৩৪৩১, ৫৮৫৪৭১, ৫৮৫৭৫৯, ৫৮৬০৭৯, ৫৮৭৯৭৯, ৫৮৮৮২৬, ৫৮৯১৭৩, ৫৯০৯১৯, ৬২৬১৮১, ৬৩৯৪৭৫, ৬৩৯৫১৯, ৬৩৯৫২৪, ৬৩৯৫২৭, ৬৩৯৫২৮, ৬৫৬১৯৫, ৬৫৬৩৯১, ৬৫৬৪৭৭, ৬৫৭৫৫৮, ৬৫৮৯৮৬, ৬৫৯৯০৯, ৬৬৪৪৪৫, ৬৬৮৮৮০,
৬৭১৩৬৮, ৬৭৪৫৯১, ৬৮৯১৫৩, ৬৯৪১৫১, ৬৯৫৫৭৯, ৬৯৬৫৬১, ৬৯৬৫৯১, ৭০৫৬২২, ৭০৮৩৭৫, ৭১০৪৬৭, ৭১৮৯৭২, ৭৫০৬০৮, ৭৫১০৪৯, ৭৫৪১৪৩, ৭৫৭৯৪৫, ৭৫৮০৫৮, ৭৫৮০৬১, ৭৫৮৮৫২, ৭৭৫৫২৮, ৭৮৩২১২, ৭৮৫২৯১, ৭৮৭০২৩, ৭৮৮৩১১, ৭৮৮৩১৫, ৭৯৩০৫৭, ৮১৩৯৭১, ৮১৪৪৫৪, ৮২১৯৮৫, ৮২৮১২০, ৮২৮৮৮১, ৮৩২০২০, ৮৩৬৬৫০,
৮৪৪২৯৬, ৮৬৪২০৭, ৮৬৪৮৬৬, ৮৬৪৯৪৪, ৮৬৪৯৬৯, ৮৭৭৫৩৪, ৮৯৪৯৩৯, ৯৩৪৯৩৭, ৯৮৫৩৪৮, ৯৮৮১৯১, ৯৯১৬৯০, ১০১১৩০২, ১০২৩৭৯২, ১০৪২২৯৬, ১০৪২৩0৬, ১০৪২৩৪১, ১০৫৫৩১০, ১০৫৭১২৭, ১০৬৩৬৮০, ১০৬৩৬৮৪, ১০৬৫০০১।
এছাড়াও নরায়ণগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে ৫টি LTM ও ১টি OTM দরপত্র আহ্বান করা হয়। সবক’টি কাজই (টেন্ডার আইডি ১০৮৫৩৬৭–১০৮৫৩৭১, ১০৮৫৭৮১) পেয়েছে Adroit Consultants & Engineers। একইভাবে ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টেন্ডার আইডি ১০৪২২৯৬, ১০৪২৩৪১, ১০৪২৩0৬, ১০৫৭১২৭, ১০৫৫৩১০, ১০৬৩৬৮০, ১০৬৩৬৮৪, ১০৬৫০০১-এই
৮টি কাজ এককভাবে পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি, যার মোট মূল্য প্রায় ৭৬ লাখ ১৭ জাজার টাকা। অভিযোগ আছে, গত ১১ মাসে আতিক একাই ২১টি কাজের মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা মূল্যের প্রকল্প Adroit ও ACE-AT JV এর নামে অনুমোদন দিয়েছেন।
আরো অভিযোগ রয়েছে, প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার গণপূর্ত অধিদপ্তরের শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুল ইসলাম বিগত আওয়ামী শাসনামলে গণপূর্ত ঠিকাদারদের ১০ শতাংশ কমে দরপত্রে অংশগ্রহণ করার জন্য দরতপত্রের রেট কোটেশন বিক্রি করেছেন। গণপূর্ত অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, মো. আতিকুল ইসলাম আওয়ামী সরকারের
সময় ইচ্ছেমতো কোটেশন বিক্রি করেছেন। বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময় হয়েছে এর মাধ্যমে। বর্তমানে এই কোটেশন বিক্রি বন্ধের জন্য ই-জিপি সংস্কারের কাজ চলছে।
এসব বিষয়ে শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুল ইসলামকে তার মুঠোফোনের হোয়াটস্অ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠালে তিনি তার বা তার স্ত্রীর সম্পৃক্ততা সরাসরি অস্বীকার না করে হোয়াটস্অ্যাপে একটি সরকারি কর্মচারি আচরণ বিধিমালার গেজেটের কপি পাঠান। আরো লিখে পাঠান যে এই প্রতিষ্ঠান তার অধীনে নয়। এগুলো সবই গুজব।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ, ঢাকা–এই অফিস যেন রীতিমতো দুর্নীতির কারখানা। আর সেই কারখানার প্রধান পরিচালক হিসেবে উঠে এসেছে এক ভয়াবহ নাম—মোহাম্মদ কায়সার কবির, নির্বাহী প্রকৌশলী। আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় পুষ্ট এই চরম সুবিধাবাদী কর্মকর্তা সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় যেমন ফ্ল্যাট আর জমি বাগিয়েছেন, তেমনি তার জন্মভূমি জামালপুরে তৈরি করেছেন অঢেল বিত্ত-বৈভবের সাম্রাজ্য।
কায়সার কবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। আজিমপুর গণপূর্ত উপবিভাগে কর্মরত থাকাকালীন তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইলিয়াসের বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারি বাণিজ্যের ভাগবাটোয়ারার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সেখানে চলত দরপত্র বানচাল, কমিশন ভাগাভাগি, নকশা বিকৃতি, ওয়ার্ক অর্ডারে কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধি এবং শত শত কোটি টাকার কাজের বিনিময়ে সিন্দুকে ঢুকতো মোটা অঙ্কের নগদ টাকা।
অফিসটি যেন হয়ে উঠেছে তার ব্যক্তিগত আড্ডাখানা। সেখানে নিয়মিত মাদক সেবন, অফিস চলাকালীন প্রকাশ্যে সিগারেট টানা আর ঠিকাদারদের সামনে অবমাননাকর ভাষায় কথা বলা যেন তার দাপ্তরিক স্টাইল। কর্মচারীরা আতঙ্কে থাকেন তার সামনে মুখ খুলতে। এমনকি একাধিক অভিযোগ রয়েছে—চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারদের নির্দিষ্ট হারে কমিশন না দিলে কাজ আটকে দেওয়া, বিল পাসে ঘুষ ছাড়া এক কদম না চলা এবং নিজের পছন্দের ঠিকাদার ছাড়া অন্যদের কোনো কাজ না দেওয়া তার পুরনো অভ্যাস।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিজেকে ‘ছাত্রলীগ নেতা’ বলে পরিচয় দিতেন এই কায়সার কবির। সরকারি অফিসার হয়ে দলীয় পরিচয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে একদিকে যেমন বাণিজ্য করেছেন, অন্যদিকে তেমনই দোসর হয়ে উঠেছেন আওয়ামীপন্থী ঠিকাদার সিন্ডিকেটের। তার ছত্রছায়ায় ঢাকায় যেমন সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, তেমনি জামালপুরে তার হয়ে কাজ চালায় কিছু স্থানীয় ‘দুর্নীতিবাজ প্রতিনিধি’—যারা কায়সার কবিরের অর্থপাচার ও সম্পদ বিনিয়োগের কাজ সামলায়।
প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা এমন অসৎ কর্মকর্তাদের কারণেই দুর্নীতির শেকড় এতটা গভীরে পৌঁছেছে। অথচ গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই—বরং ক্ষমতার রক্ষাকবচে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন কায়সার কবিরের মতো লোকেরা।
চলবে….