আওয়ামী দোসর কায়সার কবির: দুর্নীতির বিষবৃক্ষ গেড়ে গড়েছেন কোটি টাকার সাম্রাজ্য
নিজস্ব প্রতিবেদক:
গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ, ঢাকা–এই অফিস যেন রীতিমতো দুর্নীতির কারখানা। আর সেই কারখানার প্রধান পরিচালক হিসেবে উঠে এসেছে এক ভয়াবহ নাম—মোহাম্মদ কায়সার কবির, নির্বাহী প্রকৌশলী। আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় পুষ্ট এই চরম সুবিধাবাদী কর্মকর্তা সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় যেমন ফ্ল্যাট আর জমি বাগিয়েছেন, তেমনি তার জন্মভূমি জামালপুরে তৈরি করেছেন অঢেল বিত্ত-বৈভবের সাম্রাজ্য।
কায়সার কবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। আজিমপুর গণপূর্ত উপবিভাগে কর্মরত থাকাকালীন তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইলিয়াসের বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারি বাণিজ্যের ভাগবাটোয়ারার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সেখানে চলত দরপত্র বানচাল, কমিশন ভাগাভাগি, নকশা বিকৃতি, ওয়ার্ক অর্ডারে কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধি এবং শত শত কোটি টাকার কাজের বিনিময়ে সিন্দুকে ঢুকতো মোটা অঙ্কের নগদ টাকা।
অফিসটি যেন হয়ে উঠেছে তার ব্যক্তিগত আড্ডাখানা। সেখানে নিয়মিত মাদক সেবন, অফিস চলাকালীন প্রকাশ্যে সিগারেট টানা আর ঠিকাদারদের সামনে অবমাননাকর ভাষায় কথা বলা যেন তার দাপ্তরিক স্টাইল। কর্মচারীরা আতঙ্কে থাকেন তার সামনে মুখ খুলতে। এমনকি একাধিক অভিযোগ রয়েছে—চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারদের নির্দিষ্ট হারে কমিশন না দিলে কাজ আটকে দেওয়া, বিল পাসে ঘুষ ছাড়া এক কদম না চলা এবং নিজের পছন্দের ঠিকাদার ছাড়া অন্যদের কোনো কাজ না দেওয়া তার পুরনো অভ্যাস।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিজেকে ‘ছাত্রলীগ নেতা’ বলে পরিচয় দিতেন এই কায়সার কবির। সরকারি অফিসার হয়ে দলীয় পরিচয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে একদিকে যেমন বাণিজ্য করেছেন, অন্যদিকে তেমনই দোসর হয়ে উঠেছেন আওয়ামীপন্থী ঠিকাদার সিন্ডিকেটের। তার ছত্রছায়ায় ঢাকায় যেমন সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, তেমনি জামালপুরে তার হয়ে কাজ চালায় কিছু স্থানীয় ‘দুর্নীতিবাজ প্রতিনিধি’—যারা কায়সার কবিরের অর্থপাচার ও সম্পদ বিনিয়োগের কাজ সামলায়।
প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা এমন অসৎ কর্মকর্তাদের কারণেই দুর্নীতির শেকড় এতটা গভীরে পৌঁছেছে। অথচ গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই—বরং ক্ষমতার রক্ষাকবচে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন কায়সার কবিরের মতো লোকেরা।
চলবে….



