বিএনপির তুহিন এখন আওয়ামী লীগের ছায়া সরকার-০২

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দিনাজপুর-৪ আসনের (খানসামা-চিরিরবন্দর) রাজনীতি আজ এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখানে বিএনপির উপজেলা মহাসচিব রবিউল ইসলাম তুহিন এখন একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন।
বিএনপির ব্যানারে থাকলেও বাস্তবে তিনি আওয়ামী লীগের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে পুরো রাজনীতি, প্রশাসন এমনকি ব্যবসায়ী মহলেও নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন।
আওয়ামী লীগ এখানে কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে, আর সেই ফাঁকেই তুহিন দখলে নিয়েছেন ইউনিয়নভিত্তিক রাজনীতি, ঠিকাদারি, বালুমহাল, এমনকি স্থানীয় মাদক ব্যবসার গোপন শাখাগুলো।
পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেরাই এখন নিরাপত্তার জন্য তার দ্বারস্থ হচ্ছেন। তিনি প্রতিমাসে নিরাপত্তার নামে মোটা অঙ্কের টাকা তুলে নিচ্ছেন, যার ভাগ যাচ্ছে থানা, প্রশাসন, রাজনৈতিক মহলের ভেতর কিছু সুবিধাভোগীদের কাছে।
তুহিনের ক্ষমতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, স্থানীয় আওয়ামী নেতাদের মধ্যেও কেউ কেউ এখন তার ছায়ায় থাকতে চান—কারণ তাদের নিজ দলের লোকজন নেই মাঠে। আর তুহিন নিজের মতো করে প্রতিটি ওয়ার্ডে তার অনুগতদের বসিয়ে দিয়েছে।
প্রশাসন থেকেও কেউ তুহিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস করছে না। কারণ অভিযোগ আছে, থানা ও উপজেলা প্রশাসনের ভেতরেও তার কিছু ‘বিশেষ লোক’ রয়েছে যারা তাকে সব ধরনের তথ্য আগেভাগেই সরবরাহ করে দেয়।
তুহিনের ‘দুই মুখো’ চরিত্রটা এখন পরিষ্কার। তিনি একদিকে বিএনপির নেতৃত্বে থাকলেও দলের মূল নেতা-কর্মীদের চাপে রাখেন, যাতে কেউ তার বিরুদ্ধে মাথা তুলতে না পারে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের দুর্বল নেতৃত্বকে কাজে লাগিয়ে নিজের জন্য আলাদা এক ‘ছায়া আওয়ামী লীগ’ বানিয়ে ফেলেছেন।
তার কাছেই এখন এলাকার আওয়ামী, বিএনপি, জাতীয় পার্টি—সব দলের কিছু সুবিধাভোগী লোক হাত পেতে আছে।
উন্নয়নের নামে চলছে টাকা লুটের মহোৎসব। ঠিকাদারি কাজ নিজের পছন্দের লোক দিয়ে করিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এখন যেন তার নিয়মিত অভ্যাস। দিনের পর দিন রাস্তা না করেই বিল উত্তোলন, মানহীন কাজ দেখিয়ে টেন্ডার নেওয়া—সবকিছুতেই তুহিনের নাম ঘুরেফিরে আসে।
এমনকি অভিযোগ রয়েছে, ঢাকায় একাধিক গোপন বাসায় গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল আস্তানা, রয়েছে বিলাসবহুল গাড়ি, গরুর খামার, হোস্টেল—যেখানে হয়তো অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে।
সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো—তুহিন এখন প্রশাসনকেও ব্যবহার করছেন নিজের অস্ত্র হিসেবে। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললেই তাকে মামলার ভয় দেখানো হয়। রাতের আঁধারে পুলিশ গিয়ে তুলে নিয়ে আসে।
এমনকি সাংবাদিকদের ওপরও তিনি নজর রাখেন। এলাকায় এখন অনেকে বলছে, “তুহিন এখনই যদি থামানো না হয়, তাহলে সামনে এক ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হবে।”
এক সময় যারা তুহিনের পাশে দাঁড়ায়নি, এখন তার দয়া ভিক্ষা করছে। মানুষ আতঙ্কে বাস করছে, অথচ তুহিন যেন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে নেপথ্য থেকে। রাজনীতির নামে চলছে ক্ষমতার খেল, আর প্রশাসন সেখানে নীরব দর্শক।
এই ভয়ংকর সাম্রাজ্য এখনই রুখতে হবে। না হলে দিনাজপুর-৪ শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, সামাজিকভাবে, নৈতিকভাবেও চরম ধ্বংসের মুখে পড়বে। এই দুর্বৃত্তায়ন যদি এখনই না থামে, তবে রাজনীতির মাঠ আর মানুষের নিরাপত্তা—দু’টোই হারিয়ে যাবে এই এলাকায়।
এব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় এক দায়িত্বশীল নেতা বলেন, বিষয়টি শুনেছি খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপির নামে কোনো মূর্তিমান আতঙ্ক থাকবেনা। এই সিন্ডিকেট রুখতে হবে আমাদের। এরকম অনেককেই আমরা কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করেছি প্রয়োজনে তাকেও করবো। তথ্যের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি কথা শেষ করেন।
চলবে…..