লাইলাতুল কদরের দোয়া আমল ও ফজিলত

লাইলাতুল কদরের দোয়া আমল ও ফজিলত অনেক। এই কদরের রাতে সবচেয়ে বেশি যে দোয়া পড়তে হয় সেটি হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে ইহকাল ও পরের জীবনে মঙ্গল কামনা করা: “রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবান-নার। ”। বাংলা অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং পরকালের জীবনেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। এই রাত হাজার মাস অফেক্ষা উত্তম ।
রমজান মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে বিজোড় রাতগুলোর যে কোনো একটি রাতে ‘লাইলাতুল কদর’ হবে। সমাজের মুসল্লিরা এই ১০ দিনের জন্য ইতিকাফে অবস্থান করে। এই ১০ দিন ইতিকাফের অনেক ফজিলত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আমৃত্যু পর্যন্ত ইতেকাফ করেছেন।
লাইলাতুল কদরের হাদিস:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ قَامَ لَيْلَةَ القَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».
“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তাঁর পিছনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০১)
মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় এসেছে,
«فَمَنْ قَامَهَا ابْتِغَاءَهَا إِيمَانًا، وَاحْتِسَابًا، ثُمَّ وُفِّقَتْ لَهُ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ».
“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করবে, অতঃপর সে রাত লাভ করার তাওফীকপ্রাপ্ত হবে, তার পিছনের ও পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে”। মুসনাদ আহমাদ, (হাদীস নং ২২৭১৩)
নাসাঈর বর্ণনায় এসেছে,
«وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».
“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তাঁর পিছনের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে”। (নাসাঈ, হাদীস নং ৩৪০৫)
এ রাতের কিয়াম হলো, তাহাজ্জুদের সালাত আদায় ও অন্যান্য সালাত আদায় করা।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে দো‘আ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সুফইয়ান রহ. বলেন, লাইলাতুল কদরে দো‘আ করা আমার কাছে সালাত আদায়ের চেয়ে অধিক প্রিয়। আর যদি কুরআন তিলাওয়াত করে, দো‘আ করে এবং দো‘আর দ্বারা আল্লাহ নৈকট্য তালাশ করে তাহলে তা উত্তম। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের রাতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন এবং দীর্ঘ কিরাত পড়তেন। রহমাতের কোনো আয়াত আসলে আল্লাহর কাছে রহমাত চাইতেন, আযাবের আয়াত আসলে তাঁর কাছে পানাহ চাইতেন। অতএব, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত, কিরাত, দো‘আ ও গবেষণা একত্রিত করতেন।
রমযানের শেষ দশকে ও অন্যান্য সময় এভাবে সালাত আদায় করা উত্তম। শা‘বী বলেন, কদরের দিন রাতের মতোই মর্যাদাবান। ইমাম শাফে‘ঈ রহ. বলেন, কদরের রাতের পরিশ্রমের মতো কদরের দিনেও ইবাদতে কঠোর পরিশ্রম আমি মুস্তাহাব মনে করি। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَرَأَيْتَ إِنْ وَافَقْتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ مَا أَدْعُو؟ قَالَ: تَقُولِينَ: اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي».
“ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যদি কদরের রাত পেয়ে যাই তবে কী দো‘আ পড়বো? তিনি বলেন, তুমি বলবে, হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাকারী, তুমি ক্ষমা করতেই ভালোবাসো। অতএব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।” ( তিরমিযী, ৩৫৩১)
আল্লাহর পরিচয় লাভকারীগণ আল্লাহর মহত্ব ও বড়ত্ব জানার কারণে তার সমীপে নতজানু হয়ে পড়ে। পাপীগণ ক্ষমার ঘোষণা শুনে আল্লাহর কাছে তাওবা করে ক্ষমার আশা করে। সুতরাং হয় মুক্তি চাইবে নতুবা জাহান্নামে যাবে। তবে লাইলাতুল কদরে এবং রমযানের শেষ দশকে ইবাদতে কঠোর পরিশ্রম করার পরেও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; কারণ, আল্লাহর সত্যিকার পরিচয় লাভকারীরা বান্দাগণ ভালো কাজে কঠোর পরিশ্রম করে থাকেন কিন্তু নিজেদের আমল, অবস্থা ও কথাবার্তার দিকে তাকান না, বরং তারা আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনার দিকে প্রত্যাবর্তন করেন। যেমনটি ঘটে থাকে নিজের অপরাধ স্বীকারকারী গুনাহগারের অবস্থা। এজন্যই মুতাররিফ রহ. তার দো‘আয় বলতেন, হে আল্লাহ আপনি আমাদের ওপর রাজি-খুশি হয়ে যান। আর যদি আপনি রাজি-খুশি না হন তাহলে অন্তত আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
লাইতুল কদরের আরো অনেক হাদিসের মধ্যে এটা বলা হচ্ছে যে,
«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ القَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».
“যে ব্যক্তি রমযানে ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় সাওম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১৪ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬০)
লাইলাতুল কদরের বিশেষ আমল
১) পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন হওয়া: লাইলাতুল কদরের বরকত লাভের প্রধান শর্ত হলো ভেতর ও বাইরের পবিত্রতা লাভ এবং একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে ইবাদত করা।। আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি বলেন—‘উত্তম হলো- যে রাতে কদর অনুসন্ধান করা হবে, তাতে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, গোসল-সুগন্ধি-উত্তম কাপড়ের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন করা। আর বাহ্যিক সৌন্দর্য সৌন্দর্যের জন্য যথেষ্ট নয়, যদি না মানুষের ভেতরটা সুন্দর হয়। মানুষের ভেতর সুন্দর হয় তওবা ও আল্লাহমুখী হওয়ার মাধ্যমে।’ (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা- ১৮৯)
২. অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা। উত্তম হবে অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ কুরআন পাঠ করা।
৩) মাগরিব, এশা ও ফজর নামাজ জামাতে আদায় করা: কদরের রাতে মাগরিব, এশা ও ফজর নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা উচিত। তাহলে হাদিস অনুযায়ী শবে কদরের ফজিলত লাভ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ে, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে।’ (মুসলিম: ৬৫৬)
৪) রাত জেগে ইবাদত করা: সারারাত নিজে ইবাদত-বন্দেগি করা এবং পরিবারের সবাইকে ইবাদত করার জন্য জাগিয়ে দেওয়া। বছরের অন্য কোনোরাতে সারারাত জেগে ইবাদত করার ব্যাপারে এত বেশি গুরুত্ব নবীজির জীবনীতে দেখা যায় না। সাধারণত তিনি এশার নামাজের পরে বেশি দেরি করতেন না, দ্রুত ঘুমিয়ে যেতেন এবং মধ্যরাতে জেগে ইবাদত করতেন। কিন্তু শবে কদরে তিনি সারারাত জেগে ইবাদত করতেন এবং পরিবারের অন সদস্যদেরও ইবাদত করার জন্য তাগিদ দিতেন।
লাইতুল কদরের ফজিলত
১. লাইলাতুল কদর রাতের ফজিলাত বর্ণনা করে এ রাতেই একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা অবতীর্ণ হয়েছে, যার নাম ‘সূরাতুল কদর’।
২. লাইতুল কদরের মাসের এক রজনীর ইবাদাত হাজার মাসের ইবাদাতের চেয়েও উত্তম।
৩. এ রাতে পৃথিবীতে অসংখ্য ফেরেশতা নেমে আসে এবং তারা তখন দুনিয়ায় কল্যাণ, বরকত ও রহমত বর্ষণ করতে থাকেন;
৪. কদরের রাতে ইবাদতে লিপ্ত বান্দাদের ফেরেশতাগণ জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তির বাণী শোনান।
৫. লাইতুল কদরের রাতে নফল সালাত আদায় করলে মুমিনদের অতীতের সগিরা গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
ত্যাগ: লাইতুল কদরের দোয়া, লাইলাতুল কদরের ফজিলত, লাইলাতুল কদরের আমল, কদরের রাতে সবচেয়ে বড় আমল, কদরের নামাজের নিয়ম, কদরের নামাজের নিয়ত, কদরের রাতের আলোচনা, লাইতুল কদরের হাদিস, লাইতুল কদরের নামাজ, লাইলাতুল কদরের হাদিস, কদরের কোরআনের আয়াত, লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কোরআনের আয়াত, লাইলাতুল কদর ২০২৪
আরো পড়ুন: লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ম