রাজস্ব কর্মকর্তা দর্জি রুবেলের অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য : প্রভাব, দুর্নীতি আর দায়মুক্তির গল্প
নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারি দায়িত্ব পালন ও জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকার কথা থাকলেও রাজস্ব কর্মকর্তা দর্জি রুবেল হয়েছেন উল্টো উদাহরণ। বছরের পর বছর দাপ্তরিক ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ বাণিজ্য, অস্বচ্ছ লেনদেন ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন এক অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য। সরকারি বেতন-ভাতার তুলনায় তাঁর বিলাসবহুল জীবনযাত্রা এখন প্রশাসনের ভেতরে-বাইরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দর্জি রুবেলের নামে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে একাধিক দামী বাড়ি, আধুনিক গাড়ি, ব্যাংক হিসাব ও বিভিন্ন স্থানে জমি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ঘোষিত আয়ের সঙ্গে এসব সম্পদের কোনো মিল পাওয়া যায়নি। অফিসে নিয়মিত ঘুষ আদায়, ফাইল আটকে রেখে সুবিধা নেওয়া, এবং প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সুযোগ গ্রহণই এখন তাঁর নিত্যদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে।
একজন সরকারি কর্মকর্তার মাসিক বেতন যেখানে সীমিত, সেখানে রুবেলের জীবনযাত্রা আকাশছোঁয়া বিলাসে ভরপুর—যা তাঁর অবৈধ উপার্জনের ইঙ্গিত বহন করছে।
অভিযোগ উঠেছে, দর্জি রুবেল ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে দায়মুক্তভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক প্রভাবের জোরে প্রশাসনের ভেতরে-বাইরে তিনি নিজের প্রভাব বিস্তার করেছেন এমনভাবে যে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেও তা কার্যত তদন্তের মুখ দেখেনি। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে আঁতাতের কারণে তাঁকে কেউ চ্যালেঞ্জ করার সাহস পায় না।
যখনই তাঁর দুর্নীতির কোনো তথ্য প্রকাশিত হয়, তখনই তিনি সাংবাদিকদের আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে নরম করার চেষ্টা চালান বলে অভিযোগ রয়েছে। কেউ কেউ জানিয়েছেন, রুবেল নিয়মিতভাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘সম্পর্ক রক্ষা’র নামে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজের বিরুদ্ধে ওঠা খবর গোপন রাখার চেষ্টা করেন।
স্থানীয় সাংবাদিক সমাজের একাংশ বলছে, “রুবেল এমনভাবে অর্থ ও প্রভাবের বলয় তৈরি করেছেন যে, তাঁর নাম উচ্চারণ করাটাই অনেকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও প্রশাসনের একাধিক সূত্রের দাবি—যদি নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালিত হয়, তবে রাজস্ব কর্মকর্তা দর্জি রুবেলের অবৈধ সম্পদের প্রকৃত পরিমাণ বেরিয়ে আসবে। তাঁর ঘোষিত আয়ের সঙ্গে জীবনযাত্রার বৈষম্যই প্রমাণ করে, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, “একজন সরকারি কর্মকর্তা যদি এমনভাবে দুর্নীতি করে পার পেয়ে যান, তাহলে প্রশাসনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা একেবারে হারিয়ে যাবে।
বর্তমানে দর্জি রুবেল নোয়াখালীতে কর্মরত আছেন। অভিযোগ রয়েছে, নতুন কর্মস্থলেও তিনি পুরোনো প্রভাব-প্রতিপত্তি বজায় রেখেছেন। সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা উপেক্ষা করে নিজ স্বার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণ তাঁর নিত্য আচরণে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের অনেকেই তাঁর কার্যক্রমে বিব্রত, কিন্তু সরাসরি কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না।
দর্জি রুবেলের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নানা অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে—“প্রভাবশালীদের জন্য কি আইন আলাদা?”
সচেতন নাগরিকরা বলছেন, “যদি রুবেলের মতো কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে দুর্নীতি শুধু বাড়বেই, প্রশাসনের প্রতি আস্থা ধ্বংস হবে।
একজন রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে দর্জি রুবেল রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার শপথ নিয়েছিলেন, কিন্তু অভিযোগ বলছে তিনি সেই দায়িত্বের ঠিক উল্টো পথে হেঁটেছেন। এখন দেখার বিষয়—প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সত্যিই কি তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করবে, নাকি দুর্নীতির এই অধ্যায়ও থেকে যাবে দায়মুক্তির অন্ধকারে?



