গণপূর্ত প্রকৌশলী লতিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির পাহাড়, একাধিক মামলার আসামি হয়েও বহাল তবিয়তে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
গণপূর্ত বিভাগের শেরেবাংলা নগর-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রভাব ও রাজনৈতিক আশ্রয়ে তিনি কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলেন।
সূত্র জানায়, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র আন্দোলন দমনে লতিফুল ইসলাম সরাসরি আর্থিক সহায়তা ও রসদ সরবরাহ করেছিলেন। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। বাড্ডা থানায় দায়ের হওয়া সি.আর. মামলা নং ৬৩/২৫ এবং এফআইআর নং ০৬, তারিখ ০৩ মার্চ ২০২৫-এ তাঁর নাম রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, নির্বাহী প্রকৌশলী পদে থেকে তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, সংসদ ভবনসহ একাধিক সরকারি স্থাপনার সংস্কার কাজে অস্বাভাবিক দর নির্ধারণ, ঘুষ গ্রহণ ও পছন্দের ঠিকাদারদের মাধ্যমে কাজ বণ্টনের মতো অনিয়ম করেছেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, লতিফুল ইসলাম তাঁর অধীনে থাকা জুনিয়র কর্মকর্তাদের চাপ দিয়ে মনগড়া প্রাক্কলনে স্বাক্ষর করিয়ে নিতেন। খুলনায় কর্মরত থাকাকালেও তাঁর বিরুদ্ধে অনুরূপ ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল।
সূত্র আরও জানায়, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের ছত্রছায়ায় থেকে লতিফুল ইসলাম দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলেন। এমনকি তাঁকে “মিস্টার ১৫” নামে ডাকা হয়, কারণ প্রতিটি প্রকল্পে ১৫% কমিশন নিতেন বলে সহকর্মীদের অভিযোগ।
এদিকে, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সময় আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত এই কর্মকর্তা এখন বিএনপি ঘরানার নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি পদোন্নতির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করছেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে লতিফুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনিক সুরক্ষা পেয়ে আসছেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা ও দুর্নীতির মামলা চলমান থাকলেও কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
দুদক সূত্র জানায়, লতিফুল ইসলামসহ গণপূর্ত অধিদপ্তরের আরও কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে এখনো তাঁরা বহাল তবিয়তে কর্মরত, যা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
অভিযোগের বিষয়ে লতিফুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি এবং পাঠানো বার্তাতেও কোনো জবাব দেননি।



