দেবিদ্বারে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্নসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগ,তদন্ত কমিটি গঠন
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অভিযোগ, ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ, অডিট কমিটি ছাড়াই অনুমোদন, অডিট প্রতিবেদনে অসংগতি ও জাল রেজ্যুলেশন তৈরি, গোপন রেজ্যুলেশন বই তৈরি, বেআইনি বরখাস্ত, আর্থিক জালিয়াতিসহ সর্বশেষ চার লক্ষ টাকা ঘুষ না দেওয়ায় রহিমা বেগম নামে এক আয়াকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ অডিটে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন, পরীক্ষা ফি, সেশন চার্জ, বিজ্ঞানাগার, খেলাধুলা, স্কাউট, গ্রন্থাগার, বিদ্যুৎ বিলসহ নানা খাতে সংগৃহীত মোট ৪৩ লাখ ৫৯৫ টাকা বিদ্যালয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি। প্রতি ছয় মাস ব্যবধানে অভ্যন্তরীণ অডিটি কমিটি গঠন করে আয়-ব্যয়ের রিপোর্ট সভায় উপস্থাপন হলেও আলোচনা শেষে অনুমোদন করা হয়েছে। তবে গত ২০ সালের জুন থেকে ২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কোন ধরনের নিরীক্ষণ, অডিটি কমিটি গঠন, প্রতিবেদন তৈরি, আয়-ব্যয়ের হিসাব তৈরি কিংবা ব্যাংকে জমা না রেখে লাখ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে।
যদিও প্রধান শিক্ষক নিজেই কৃত্রিমভাবে অডিট প্রতিবেদন তৈরি করে সভার কার্যবিবরণীতে অনুমোদিত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে সাবেক সভাপতি চিঠি দিয়ে জানান যে, সেই রেজ্যুলেশন টেম্পারিং করা হয়েছে। এছাড়া, বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন আয়া রহিমা আক্তারকে কোনো লিখিত নোটিশ ছাড়াই মৌখিকভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী আলমগীর হোসেন।
এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের ভেতরে-বাইরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। জানা যায়, তৎকালীন সভাপতির দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অজ্ঞাতসারে এ রেজুলেশন তৈরি করা হয়েছিল।
এদিকে এসব ঘটনায় সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন— ‘যে প্রতিষ্ঠানে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠছে, সেখানে যদি এমন অর্থ আত্মসাৎ হয়, তবে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা কোথায় থাকে?’ অভিভাবকদের দাবি, দুর্নীতির দায়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না হলে এই ধরনের অপকর্ম আরও উৎসাহিত হবে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক কাজী আলমগীর হোসেন কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান ,
বিদ্যালয় চলে বিদ্যালয়ের নিয়মে, প্রধান শিক্ষক তো একা একটি বিদ্যালয় চালাতে পারে না৷ যদি অনিয়ম ও অর্থ আত্নসাৎ এর মতো কিছু থাকে তদন্ত কমিটি তদন্ত করে আমার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিবে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ড. মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, তিনি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যালয়ের কিছু বিষয়ে অসংগতি পাওয়া গেছে, রেজুলেশন টেম্পারিং করা হয়েছে। এসব বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। আগামীকাল ১২ অক্টোবর জবাব দেয়ার শেষ তারিখ। তিনি এখনো কোনো জবাব দেননি।
তিনি আরও বলেন, আমি এডহক কমিটির সদস্য, আমি জিনিসগুলো অ্যাড্রেস করে বোর্ডে অভিযোগ দিয়েছি। এছড়া মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও নিরীক্ষা বিভাগ সেখানেও অভিযোগ দেয়া আছে। তারা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। ব্যক্তিগতভাবে তার কাছে আমার কোনো অভিযোগ নেই, কিন্তু প্রধান শিক্ষক হিসেবে তার কাছে আমি আমার জবাবদিহিতা চেয়েছি।
দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্ত কমিটি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



