দুর্নীতির অভিযোগে ওএসডি হওয়া মো. সলিম উল্লাহ এখন ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা: দীর্ঘ ১৬ বছর শিল্প মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকার পর একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হওয়া মো. সলিম উল্লাহ বর্তমানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তার বিরুদ্ধে একাধিক জাতীয় দৈনিকে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ প্রকাশিত হলে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে ওএসডি করা হয়। তবে, প্রভাবশালী মহলের সুপারিশ ও ব্যক্তিগত তদবিরের মাধ্যমে তিনি পুনরায় গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্বে আসীন হন।
দুর্নীতির অভিযোগ ও ওএসডি হওয়া
প্রশাসনের বিভিন্ন সূত্র জানায়, শিল্প মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় মো. সলিম উল্লাহর বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও ক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রমে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি,
ঘুষ গ্রহণ ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন নিয়োগ ও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
একাধিক জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের নজরে আসে বিষয়টি। পরে, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় সরকার তাকে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে ওএসডি করে।
প্রশাসনে সাধারণত ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের বিশেষ কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয় না, কিন্তু মো. সলিম উল্লাহ পরবর্তীতে শক্তিশালী লবিং ও রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে যোগদান করেন।
ভূমি মন্ত্রণালয়ে পুনরায় নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন
তার মতো একজন বিতর্কিত কর্মকর্তার আবারও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে প্রশাসনের ভেতরে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি নীতিমালা অনুসারে, কোনো কর্মকর্তা যদি গুরুতর অনিয়মের কারণে ওএসডি হন
, তাহলে সাধারণত তাকে মাঠ প্রশাসনে বা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি করা হয়। কিন্তু মো. সলিম উল্লাহর ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটেছে, যা অনেকের কাছেই বিস্ময়কর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, “যে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, যার কারণে তাকে ওএসডি করা হয়েছিল, তিনি কীভাবে আবার এত গুরুত্বপূর্ণ পদে ফিরে এলেন, তা আমাদের কাছেও অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে।
প্রশাসনের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হলে এ ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও কঠোর হওয়া দরকার।”
বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে, মো. সলিম উল্লাহর মতো বিতর্কিত কর্মকর্তাদের পুনর্বহাল করার বিষয়টি প্রশাসনিক দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের উচিত এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যতে প্রশাসনের সুশাসন ও নৈতিকতা বজায় থাকে।
জনসাধারণের প্রত্যাশা, প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।